ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতারণার ফাঁদে এমপি-ডিআইজিসহ তিন শতাধিক মানুষ
বন্দর থেকে অল্প দামে গাড়ি ক্রয় করে দেওয়ার নাম করে প্রথম বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিতেন তিনি,
এরপর সেই গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর (রেন্ট এ কার) কথা বলে মালিকের সঙ্গে চুক্তি করতেন ও গাড়ি নিজের কাছে রেখে দিতেন।
একই গাড়ি এভাবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া নথি দেখিয়ে চুক্তি করতেন তিনি।,
এমনকি একই নিবন্ধিত নম্বরের গাড়ি জাল নথির মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন।
এসব গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর নাম করে নিজের কাছে রেখে দেওয়ায় একাধিকবার বিক্রির বিষয়টি ধরা পড়ত না,
এভাবে প্রতারণা করে প্রায় ৩০০ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংসদ সদস্য (এমপি), পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি),
পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন, যাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে,
তিনি হলেন কুমিল্লার মেঘনার মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন (৪৩)।
ঢাকার মুগদা থানার একটি মামলার সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মেঘনা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার
করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি।
এ নিয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবি।
সেখানে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জাকির বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ
থেকে গাড়ি কিনতে পুরো টাকা নিলেও সেটি ডাউন পেমেন্টে কিনতেন। ভাড়ায় খাটানোর কথা
বলে চুক্তির পর কয়েক মাস ঠিকমতো অর্থ পরিশোধ করতেন তিনি, তবে কয়েক মাস পর থেকে তিনি
টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিতেন। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে এভাবে অনেকেই ভুক্তভোগী হয়েছেন।
ডিবি জানায়, জাকির ২০০৮ সালে ঢাকায় এসে গাড়িচালনার প্রশিক্ষণ নেন, পরে তিনি ঢাকায় লেগুনা চালানো শুরু করেন।
দুই বছর লেগুনা চালানোর পর তিনি একটি গাড়ি কেনেন। কুমিল্লায় তাঁর সঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা হয়,
ওই কর্মকর্তা তাঁকে একটি গাড়ি কিনতে ভাড়া দেন। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা
ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পরিচয় হয়। এই সখ্যের সূত্র ধরেই অল্প দামে গাড়ি কিনে ভাড়ায় খাটানোর
প্রলোভনের ফাঁদে পান দেন অনেকেই, তাঁদের একটি বড় অংশ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া তিনজন এমপিও কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন জাকির।
কুমিল্লায় তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জমি কিনেছেন,
ঢাকায় তাঁর একাধিক ফ্ল্যাটও রয়েছে। সম্পদের মালিক হওয়ার পর তিনি কুমিল্লায় স্থানীয় পর্যায়ে
যুবলীগের পদ বাগিয়ে নেন। একপর্যায়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।