ঈশ্বরের হাতের সেই বলের মূল্য ২৫ কোটি টাকা!
এই ক্রীড়াভুবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া হচ্ছে ফুটবল।
আর তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারের নাম হচ্ছে ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা।
বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফিফা’র রায়ে যেমন জনগণের কাছে
সর্বকালের সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবল গ্রেট।
তেমনি ফিফার দৃষ্টিতে সর্বকালের সেরা গোলের মালিকও ছিলেন ১০ নম্বর জার্সিধারী ম্যারাডোনা।
দুঃখজনকভাবে এবারের বিশ্বকাপে তো বটেই, আর কোনোদিনই
ফুটবল গ্যালারিতে উন্মাদনায় মাততে দেখা যাবে না তাকে।
প্রায় বছরদুয়েক আগেই চিরবিদায় নিয়েছেন ইহকাল থেকে।
তার মহাপ্রস্থানের পর তার একটি জার্সি নিলামে বিক্রি হয়েছিল বিশ্বরেকর্ড দামে (৭৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকায়)।
এবার তার সেই বিশ্বখ্যাত ‘হ্যান্ড অব গড’ বলটিও বিক্রি হলো নিলামে। যার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা!
ছিয়াশির বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার সেই হাত দিয়ে করা গোল বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি।
এ নিয়ে কখনই বিতর্ক থামবে না। যে বলটি দিয়ে তিনি এই কা- ঘটিয়েছিলেন, সেটি বিক্রি হলো বিপুল অঙ্কে।
‘অ্যাজটেকা’ নামে ওই বলটি এতদিন ছিল তিউনিশিয়ার রেফারি
আলি বিন নাসেরের কাছে, যিনি ওই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
ওই বল কে কেনেন, সেটা প্রকাশ করা হয়নি। নিলামকারী সংস্থা জানিয়েছে,
ম্যারাডোনার হাতের ছোঁয়া পাওয়া বলটি ২০ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
অবশ্য নিলামকারীরা আশা করেছিলেন, বলটির দাম ৩০ লাখ পাউন্ড হবে।
প্রয়াত ম্যারাডোনা ওই ম্যাচে যে জার্সি পরে খেলেছিলেন, তা বিক্রি হয়েছে ছয় মাস আগে।
সেটা দাম উঠেছিল ৯৩ লাখ পাউন্ড, যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
তবে বলের ক্ষেত্রে সেই দাম ধারেকাছেও যায়নি।
আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট একটি বলেই খেলা হয়।
তার অনেক পরে এক ম্যাচে একাধিক বল ব্যবহারের অনুমতি দেয় ফিফা।
ম্যারডোনাই এই ধরনীর একমাত্র ফুটবলার, যিনি একটি অতি সাধারণ
বা মাঝারি মানের দলকে সম্পূর্ণ একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেছেন।
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কথাই বলছি।
সেই স্মরণীয় আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে চিরশত্রু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে
২-১ গোলে জিতে শেষ চারের টিকিট পায় ‘লা আলবিসেলেস্তে’রা।
দলের জয়ে দুটি গোলই করেন দলের অধিনায়ক এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ম্যারাডোনা।
দ্বিতীয় গোলটিই ছিল সেই গোল, যেটিকে ফিফা সর্বকালের সেরা গোলের (গোল অব দ্য সেঞ্চুরি) স্বীকৃতি দিয়েছিল।
১০ সেকেন্ডে ৬০ গজ দৌড়ে ও পাঁচজনকে কাটিয়ে ঐন্দ্রজালিক
সেই গোলটি করে ম্যারাডোনা অমরত্ব পেয়েছিলেন ফুটবল ইতিহাসে।
তার আগেই করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গোলটি।
গোল ও ম্যাচের পর ম্যারাডোনা প্রেসকে জানিয়েছিলেন,
‘এই ঈশ্বরের হাতের গোল হচ্ছে ইংল্যাল্ডের কাছে ফকল্যান্ড
যুদ্ধে হাজারো আর্জেন্টাইনের শহীদ হবার প্রতিশোধ।’
উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনার অধীনে থাকা ‘লাস মালভিনাস’
(ইংল্যান্ডের কাছে এটা ফকল্যান্ড) দ্বীপ প্রায় ৩০০ বছর ধরে দখলে রেখেছিল ইংল্যান্ড।
১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনা বিনাযুদ্ধে সেই দ্বীপটি নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয়।
এ নিয়ে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা এক রক্তরক্ষী যুদ্ধ বাঁধে। এ যুদ্ধে
২৫৫ ব্রিটিশ সৈন্য ও ৬৫০ আর্জেন্টাইন সৈন্য প্রাণ হারায়।
শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন সৈন্যরা আত্মসমপর্ণ করলে আবারও ফকল্যান্ড দখল করে নেয় ইংল্যান্ড।
‘হ্যান্ড অব গড’ গোল প্রসঙ্গে রেফারি বিন নাসির বলেন,
‘ওই গোলটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে সহকারী রেফারি বুলগেরিয়ার বোগডান ডোচেভ বেশি দায়ী।
কারণ তিনিই ঘটনাটি সবচেয়ে ভালো দেখেছেন। প্রথমে কিছুটা সংশয়ে ছিলাম।
তবে ডোচেভ হ্যান্ডবলের সিগন্যাল না দেয়ায় গোলটির সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে হয়।’
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন