এ যেন অন্য আর্জেন্টিনা!
কাতারের ৯৭৪ স্টেডিয়ামে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে গতকাল পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা।
‘ভামোস আর্জেন্টিনা! ভামোস মেসি! এগিয়ে চলো আর্জেন্টিনা।
এগিয়ে চলো মেসি। ও মেসি, একটা গোল করো’- গ্যালারির প্রায়
৩৫ হাজার আর্জেন্টাইন সমর্থক একই সুরে, বিরতিহীনভাবে গাইলেন একই গান।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে তারা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তৈরি করলেন নীল সমুদ্রের ঢেউ।
মাঠে তখন লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া, অ্যাকুনা, ফার্নান্দেজ,
আলভারেজদের আক্রমণের ঢেউ সামলাতে ব্যস্ত পোলিশ ডিফেন্স লাইন।
সেই আক্রমণের ঢেউ সামলানোর মতো ডিফেন্স লাইনে তেমন কোনো
বাঁধ তৈরি করতে পারেনি পোল্যান্ড। ফলাফল আর্জেন্টিনার ২-০ গোলের জয়।
এই জয়ে গ্রুপের শীর্ষে থেকেই নকআউট পর্বে গেলেন মেসিরা।
শেষ ষোলোতে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। নকআউটে আর্জেন্টিনার
সঙ্গী হলো হেরে যাওয়া পোল্যান্ড (চার পয়েন্ট)। সৌদি আরবের
বিপক্ষে গতকাল ২-১ গোলে জিতে চার পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও
গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় মেক্সিকো বিদায় নিল বিশ্বকাপ থেকে।
এই আর্জেন্টিনা, চ্যাম্পিয়নের স্পিরিট নিয়ে খেলা আর্জেন্টিনা।
এখনো যারা সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচে পরাজয়ের দুর্ঘটনার
কথা মনে রেখেছেন, তাদের জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া আর্জেন্টিনা।
এই আর্জেন্টিনা, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এই আর্জেন্টিনা,
ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে মনে করিয়ে দেওয়া এক দল। এই দলের আছে তারুণ্যের শক্তি।
এই দলের ঝুলি পূর্ণ অভিজ্ঞতায়। এই দলের আছে
বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিতে চুমু খাওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি!
কাতার বিশ্বকাপে সি-গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে গতকাল
পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি
পোল্যান্ডের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে হেলে-দুলে
হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন! কিছুক্ষণ পর পর খানিকটা দৌড়ে
আবারও থেমে পড়ছিলেন তিনি! কিছুটা অবাক হয়েছিলেন
কি দর্শকরা! ম্যাচের শুরুর দিকের এই মেসি একটু পরই
ভয়ংকর হয়ে উঠলেন। একের পর এক সুযোগ তৈরি
করতে থাকলেন সতীর্থদের জন্য। কখনো অ্যাকুনা, কখনো
ডি মারিয়া, কখনো-বা আলভারেজ অথবা ফার্নান্দেজকে বল বাড়িয়ে দিলেন।
লিওনেল মেসি গতকাল পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুর
দিকে পোলিশ ডিফেন্সের ফাঁকফোকর খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন
হেলে-দুলে, হেঁটে বেড়িয়ে। পরখ করে দেখছিলেন প্রতিপক্ষকে।
পোলিশ রক্ষণব্যূহের দুর্বলতা বের করার চেষ্টা করছিলেন।
প্রথমার্ধে মেসি খেলেছেন একেবারে সামনের দিকে। সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে।
ডি মারিয়া কখনো বাম কখনো ডান উইংয়ে চলে যাচ্ছিলেন।
প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করছিলেন। অ্যাকুনা উঠে আসছিলেন ডিফেন্স থেকে।
তার ওভারল্যাপিংয়ে আর্জেন্টিনার গতি আর ছন্দ দুটোই বেড়ে যাচ্ছিল।
পোলিশদের রক্ষণভাগ বারবার এলোমেলো হয়ে পড়ছিল।
কিন্তু এতকিছুর পরও প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে আটকে রাখে পোল্যান্ড।
ভিএআর দেখে এসে পেনাল্টি দেন রেফারি। ৩৯ মিনিটে মেসির
দুর্বল শটের পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক সেজনি।
এরও আগে ২৮ মিনিটে অ্যাকুনা সুযোগ হারান। ডি মারিয়াও
ওপেন-নেট গোল মিস করেন। প্রথমার্ধটা আর্জেন্টিনা দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েও গোল আদায় করতে পারেনি।
তবে দ্বিতীয়ার্ধেই দেখা যায় ভিন্ন আর্জেন্টিনাকে। প্রথমার্ধের বিরতির
পর একটু তাড়াতাড়িই মাঠে চলে আসেন মেসিরা। যেন গোল করার
খুব তাড়া আছে। কোচ লিওনেল স্কালোনির কাছ থেকে কোনো
টোটকা নিয়ে এসেছেন তারা! সত্যিই যদি স্কালোনি কোনো টোটকা
দিয়ে থাকেন তাহলে তা কাজে লেগে গেল। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই
ম্যাচের প্রথম গোলটা করে নিল আর্জেন্টিনা। ডিফেন্ডার মলিনার
ছোট পাসে বল পেয়ে ডি বক্সের লাইন থেকে মাটি কামড়ানো
শটে পোলিশ ডিফেন্ডার গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান
ম্যাক অ্যালিস্টার (৪৬ মিনিট)। এর একটু পরই দারুণ আরেকটা
সুযোগ পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। ৬৭ মিনিটে
ফার্নান্দেজের পাসে বল পেয়ে ডি বক্সের ভিতর থেকে
জোরালো শটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আলভারেজ।
গতকাল আর্জেন্টিনা যেন মরণপণ করেই খেলতে নেমেছিল।
এমন সব সুযোগ তৈরি করে তারা, যা গত দুই ম্যাচে কল্পনাও করা যায়নি।
দুই ম্যাচ মিলিয়ে আর্জেন্টিনা গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল মোটে ৮টা।
গতকাল ১২টারও বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা!
প্রতিপক্ষের গোলমুখে ২১ বারেরও বেশিবার আক্রমণে যায়।
লিওনেল মেসি গতকাল গোল করতে পারেননি। তবে দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেছেন।
গোল মিস করেছেন কয়েকটা। তারপরও মেসির খেলায় ছিল জাদু।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন