• শুক্র. জুন ৯, ২০২৩

গোসল বা হাঁটার সময়ই কেন আসে জটিল সব ভাবনা?

মার্চ ৩১, ২০২৩

গোসল বা হাঁটার সময়ই কেন আসে জটিল সব ভাবনা?

আপনি হয়তো গুনগুন করতে করতে গোসল করছিলেন। কিংবা নির্ভার মনে চারপাশ

দেখতে দেখতে হাঁটছিলেন। হঠাৎই মাথায় খেলে গেল জটিল এক ভাবনা। কিংবা

এমন এক সমস্যার সমাধান মাথায় চলে এল, যেটা ভেবে হয়তো কোনো কূলকিনারাই

পাচ্ছিলেন না। হ্যাঁ, এটা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই হয়। সেরা সেরা চিন্তা আসে গোসল

কিংবা হাঁটার সময়। জেনে নিন তার কারণ। সঙ্গে এ নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা।

বিষয়টার সঙ্গে সংযোগ আছে মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতার। একটা নির্দিষ্ট সময়ে

মস্তিষ্ক কতখানি চিন্তা করতে পারবে, তা নির্দিষ্ট। এই সীমাবদ্ধতার কারণেই একসঙ্গে

অনেক কাজ করতে গেলে মানুষ তালগোল পাকিয়ে ফেলে। অথচ দিনের বেশির

ভাগ সময় আমাদের নানা দৈনন্দিন কাজ নিয়ে অনবরত ভাবতে হয়। হয়তো আপনি

অফিসে কাজ করছেন। কিছু না করলেও আপনাকে চিন্তা করতে হয় নিজের

পোশাক নিয়ে, বসার অবস্থান নিয়ে, পরবর্তী করণীয় নিয়ে।

শুনতে সামান্য মনে হলেও এগুলোর জন্যও আপনাকে ভাবতে হয়। ফলে মস্তিষ্কের

বেশ খানিকটা অংশ তাতে মনোযোগী হয়ে পড়ে। অথচ একটা নির্দিষ্ট সময়ে মস্তিষ্কের

চিন্তা করার সামর্থ্য নির্দিষ্ট। ফলে আপনি যখন কোনো সমস্যায়

মনোযোগ দেন, তাতে মস্তিষ্ক পূর্ণ সামর্থ্য প্রয়োগ করতে পারে না।

অন্যদিকে আপনি যখন এমন কোনো কাজ করবেন, যার ব্যাপারে আপনার শরীর ও

মন সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত, তখন মস্তিষ্ককে সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না। ফলে আপনার

চিন্তা করার সামর্থ্য বেড়ে যায়। এমন কাজের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ দুটি কাজ হলো গোসল ও হাঁটা।

এগুলোকে বলা যায় সৃজনশীল চিন্তার ইনকিউবেটর। তখন এতটাই নিজের মতো থাকা যায়,

বাইরের জগৎ থেকে এত বেশি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায় যে মস্তিষ্কে যেন

গভীর চিন্তার প্রবাহ সৃষ্টি হয়। সক্রিয় হয়ে ওঠে অবচেতনের ভাবনাগুলো।

আর সেখান থেকেই আসে কিনারা না হওয়া জটিল সব সমস্যার সমাধান বা সম্পূর্ণ নতুন সব ভাবনা।

এর মধ্যে গোসল করার সময় পাওয়া যায় বাড়তি সুবিধা। পানি পড়ার অবিরত শব্দ

আপনাকে বাইরের দুনিয়া থেকে একেবারেই আলাদা করে দেয়। বিশেষ করে গোসল

করতে করতে একটা আবিষ্কারের কথা রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে আছে ইতিহাসে।

আর্কিমিডিসের সেই ‘ইউরেকা’! গোসল করতে গিয়ে বের করে ফেলেন

রাজার দেওয়া জটিল সমস্যার সমাধান। আবিষ্কার করে বসেন প্লবতার সূত্র।

অন্যদিকে, হাঁটাকে রীতিমতো হাতিয়ারের মতো ব্যবহার করেন অনেকেই।

সমস্যায় পড়লেই যেমন পায়চারি শুরু করে দেন। বিখ্যাত ব্যক্তিরাও এর ব্যতিক্রম নন।

ভার্জিনিয়া উলফ যেমন নিয়মিত হাঁটতেন। আর তখনই

ভেবে ভেবে আরও নিখুঁত করে তুলতেন তাঁর বিখ্যাত ‘চৈতন্যপ্রবাহ’।

এমনকি তাঁর ‘দ্য লাইটহাউস’ উপন্যাসের ভাবনাটাও এসেছিল একদিন হাঁটতে হাঁটতে।

কাছেই একটা পাইপ দিয়ে বুদ্‌বুদ বের হচ্ছিল। রাজ্যের কোলাহল থেকে তাঁকে দূরে

নিয়ে গিয়েছিল সেই শব্দ, যেন গিয়েছিলেন ধ্যানের রাজ্যে। আর সেখানেই এসেছিল উপন্যাসটির ভাবনা।

ভাবার জন্য হাঁটতেন জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিৎশেও।

‘টোয়াইলাইট অব দ্য আইডলস’-এ অকপটে স্বীকার করেছেন, সব মহান ভাবনারই জন্ম হয় হাঁটার সময়।

তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে

আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন