গ্রাহকের আস্থা কমেনি
‘গুজবে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন।’ এমন সংবাদের সঙ্গে পরিচিতি কম-বেশি সবারই আছে।
বিশেষ করে যাদের বিনিয়োগ আছে তারা খুব ভালোভাবেই জানেন
সামাজিক মাধ্যমে সামান্য গুজবেই বড় দরপতন ঘটে শেয়ারবাজারে।
সাম্প্রতিক ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাংক
দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়েছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশের
ব্যাংকারদের ফোন করে জিজ্ঞেস করছেন, তারা দেশে টাকা পাঠাবেন কিনা।
আবার দেশেই থাকেন এমন অনেকে জানতে চাচ্ছেন, ‘ব্যাংকে এখন টাকা রাখা কতটা নিরাপদ।
ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে না তো!’ অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা স্পষ্ট বলছেন, এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।
এমন গুজবে কান না দিতে গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।’
গুজব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি এবং স্থানীয় ব্যাংক-কর্মকর্তাদের
আশ্বাসে এখনো ব্যাংক-ব্যবস্থায় আস্থা রাখছেন গ্রাহকরা।
প্রাথমিকভাবে দুয়েকজন ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও তারা পরে আবার
জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা।
এদিকে হুন্ডি বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর সঙ্গে জড়িতদের
বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের আলমগীর হোসেন থাকেন সৌদি আরব।
সেখান থেকেই রাজধানী ঢাকার একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছেন তিনি।
তার প্রশ্ন, ব্যাংকে এফডিআর করা টাকা পাব তো? ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে আশ্বাস দেন।
তার আশ্বাসে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজবে কান দিয়ে আলমগীরের
মতো আরও অনেকে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
এই প্রসঙ্গে খুদে বার্তায় (মেসেজে) কথা হয় আলমগীরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা রাখলে দুয়েক মাস পর আর পাওয়া যাবে না।
ফেসবুকে এমন অনেক পোস্ট আমার চোখে পড়ে। ফলে ব্যাংক থেকে
টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিই। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনি আমার
স্ত্রীকেও বলেছিলাম টাকা তোলার বিষয়ে। কিন্তু আমার নিকটাত্মীয় এক
ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এটা গুজব বলে জানান।
ব্যাংকের টাকায় কোনো সমস্যা হবে না বলেও আমাকে আশ্বাস দেন তিনি।
ফলে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত বাতিল করি।’
আলমগীর ছাড়াও বেশ কয়েক ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
প্রথম দিকে গুজবের কারণে ভয় পেলেও পরে তারা ব্যাংকের ওপরই
আস্থা রেখেছেন। তারা বলছেন, ‘নগদ টাকা তো সঙ্গে রাখা সম্ভব নয়।
চোর-ডাকাত নানা সমস্যায় পড়তে হবে। তাই ব্যাংকে আস্থা রাখা ছাড়া উপায় নেই।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল ও কাওরান বাজারে কয়েকটি
ব্যাংকের শাখায় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়,
অন্যান্য দিনের মতোই গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলছেন, জমা দিচ্ছেন।
কারও মধ্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশেই পূবালী ব্যাংকের একটি শাখা।
সেই শাখায় গিয়ে কথা হয়, হাসান মেহেদি নামের এক গ্রাহকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কত কিছুই তো গুজব ছড়ায়।
কয়েক মাস ধরে বলা হচ্ছে, আমাদের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হবে।
কই, কিছুই তো হলো না। এসব গুজব। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ঠিক।
মানুষের কষ্ট হচ্ছে। ক্ষোভ-আতঙ্ক আছে। এই সুযোগ নিয়েই
সুযোগসন্ধানীরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে।’ কারওয়ান বাজারে আইএফআইসি
ব্যাংকের শাখায় কথা হয় গ্রাহক নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন,
‘এই ফেসবুক-টেসবুক এসেই বেশি বেশি গুজব ছড়াচ্ছে। এটা নাই,
ওটা নাই। ওটা হবে, এটা হবে। কত কিছু। এত দিন গুজব ছড়ানো হলো,
সেটাতে সুবিধা হলো না; এখন ছড়ানো হচ্ছে, ব্যাংকে টাকা নাই,
ভবিষতে আরও কতে কিছু ছড়ানো হবে, কে জানে।
জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রামপুরা শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী
কর্মকর্তা দেবাশিস বসাক বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা তোলা নিয়ে
গুজবের বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি।
কিন্তু আমার শাখায় বা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অন্য কোনো শাখায় এর
প্রভাব পড়েছে এমন তথ্য পাইনি। তবে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে টাকা কিছুটা বেশি তোলা হয়েছে।
অর্থাৎ আগে যেখানে ১ কোটি টাকা উত্তোলন হতো সেখানে হয়ত
২০ লাখ টাকা বেশি উত্তোলন হয়েছে।’ এর কারণ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকে।
সে কারণে মাঝে মাঝেই এমন ঘটনা ঘটে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট
আমানত ১৪ লাখ ৮২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে
১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা বেশি। বর্তমানে মোট তারল্যের পরিমাণ ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা।
অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট নেই। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী
পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে তারল্যের সংকট নেই।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে সুযোগ সন্ধানী চক্র ব্যাংক ব্যবস্থা
নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মানুষ যাতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে বিশ্বাস না
করে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তবে কোনো ব্যাংকে যদি তারল্য বা অন্য কোনো সংকট দেখা দেয়
তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকট সমাধানে সহায়তা দেবে বলে জানান তিনি।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সেলিম আর এফ হোসেইন বলেন,
‘দেশের কিছু ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট রয়েছে। কিন্তু তারল্যে সংকট
নেই। সংকট তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কিছু দুষ্টু লোক ব্যাংকের তারল্য
নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। তাতে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
স্বাধীনতার পর কোনো ব্যাংক গায়েব হয়ে যায়নি। দু’-একটি ব্যাংকে
সংকট তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তার সমাধান হয়েছে।
ভবিষ্যতেও সংকট তৈরি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এগিয়ে আসবে।’
গুজবে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
‘মানুষ যদি বিশ্বাস করে তাহলে হয়তো কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
তবে আমার বিশ্বাস, মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থায় আস্থা রাখবে। গুজবে বিশ্বাস করবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ
বলেন, ‘সংকটের সময় একটি মহল সুযোগ বুঝে নানা গুজব ছড়ায়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভুল করেছে। তারা প্রকাশ করেছে যে,
১০টি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। এটা প্রকাশ করার দরকার ছিল না।
এটা প্রকাশ পাওয়ার পরই সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে গেছে। এটা সাধারণত ব্যাংকগুলোই জানে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যাংক দুর্বল থাকতেই পারে। তাদের হাতে
কী পরিমাণ অর্থ আছে, ক্রেডিট রেটিং কী সেগুলো ব্যাংক জানবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে।
জনসমক্ষে বলা হবে কেন? লোকজন বোঝে না তারল্য কী।’
‘কিন্তু লোকজন মনে করেছে, না জানি কী হয়ে গেছে।
অলরেডি আইএমএফ আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক নতুন ঋণ দিচ্ছে না।
এমনিতেই এই কয়টি ঘটনায় আস্থায় কিছুটা চিড় ধরেছে।
তার মধ্যে আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের বিষয়ে বলা হচ্ছে,
তাদের ঋণখেলাপি অনেক বেশি। লোকজন হয়তো কিছু টাকা তুলে ফেলেছে।কেউ কেউ হয়তো সঞ্চয় ভেঙেছে।’
আমানত নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ॥
গুজবের ডালপালা যখন বেশ জেঁকে বসার চেষ্টা করছিল, তখনই বিজ্ঞপ্তি
দিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ‘ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে রক্ষিত আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ।
এর পরও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাংকের আমানত
তুলে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচার হচ্ছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে।
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি।
আশা করা যায়, আগামী দিনেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না।
ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।’
পরের দিন ১৪ নভেম্বর একই বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের
মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদও বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে
কোনো তারল্য সংকট নেই। তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার
জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট নীতি
সর্বদা চালু রয়েছে। ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর।
হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠালে কঠোর ব্যবস্থা ॥ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স
পাঠালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আর্থিক খাতের
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ
কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন বার্তা দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের অর্জিত মূল্যবান
বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ
পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায়
মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও
নিরাপদ রাখুন। এতে আরো বলা হয়, অবৈধ পথে রেমিট্যান্স
প্রেরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি নভেম্বর মাসেও প্রবাসীদের
পাঠানো রেমিটেন্সের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।
চলতি মাসের ১১ দিনে ৬৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার এসেছে দেশে।
আগের মাস ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। আর সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
অথচ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যো পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এর মধ্যে জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ডলার। আর আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ডলার।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন