নেইমারহীন ব্রাজিলের প্রথম পরীক্ষা
দিন-রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টাই ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন নেইমার।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনিওস যখন তথ্যটা
জানাচ্ছেন, প্রথমে মনে হলো, বিশ্বকাপে ফিরতে নেইমারের ব্যগ্রতা
বোঝাতেই কথাটা বলছেন। ২৪ ঘণ্টাটা নিশ্চয়ই প্রতীকী অর্থে।
আসলে তা নয়। আক্ষরিক অর্থেই ২৪ ঘণ্টা। অ্যাঙ্কেলের চোট জয়
করতে নেইমার ফিজিওথেরাপি রুমেই থাকছেন। ঘুমাচ্ছেনও সেখানেই।
দোহার প্রাণকেন্দ্রে ঝাঁ চকচকে ওয়েস্টিন হোটেল। এই বিশ্বকাপে
ব্রাজিলের ঠিকানা। কাল দুপুরের দিকে সেই হোটেলের বাইরে হলুদ
জার্সির একটা জটলা। ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের ভিড়টা যত না প্রিয়
খেলোয়াড়দের একঝলক দেখতে, তার চেয়ে বেশি নেইমারের চোট সম্পর্কে আপডেট পেতে।
যা পাওয়া গেল ব্রাজিলের সংবাদ সম্মেলনে। মার্কিনিওসের পর যাতে
কথা বললেন তিতে। দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ নিয়ে একটাই প্রশ্ন হলো।
অন্য বিষয় নিয়েও দু–একটা। ৩৫–৪০ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনটার বাকি অংশজুড়ে শুধুই নেইমার।
সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পরই তিতে বলে দিয়েছেন, নেইমার
এই বিশ্বকাপে খেলবেন। কিসের ভিত্তিতে বলেছিলেন,
এখনো কি তা-ই মনে করেন, ফিরলে কবে নাগাদ ফিরতে
পারেন—এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো। তিতে তাঁর আগের
বক্তব্যেই অটল থাকলেন। তবে নেইমার কবে ফিরতে পারেন, অনুমিতভাবে সুনির্দিষ্টভাবে তা বলতে পারলেন না।
চোট পেয়ে নেইমার বাইরে আর ব্রাজিল বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামছে।
এই দুটি মেলালে কী মনে পড়ে? নিশ্চয়ই বেলো হরিজন্তের সেই ভুতুড়ে রাত।
কোয়ার্টার ফাইনালে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল নেইমারের।
তাঁকে ছাড়া সেমিফাইনাল খেলতে নেমে যা হলো, তা বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসেই এক বিস্ময়।
৭-১ গোলের ওই ম্যাচের আর কিছু মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার
আছে বলে মনে হয় না। ২০১৪ বিশ্বকাপের ওই ঘটনা বারবার
কেন ফিরে দেখা হচ্ছে, এর কারণও আপনি জানেন।
চোটে ছিটকে পড়া নেইমারকে ছাড়াই আজ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে।
জার্মানি আর সুইজারল্যান্ড এক নয়। প্রতিবেশী দেশ হতে পারে,
তবে ফুটবল শক্তি-ঐতিহ্যে অনেক ব্যবধান। ম্যাচও তো দুই রকম।
বেলো হরিজন্তেতে ছিল সেমিফাইনাল আর এখানে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ।
সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জিতে ব্রাজিল গ্রুপ পর্বে তাদের
উজ্জ্বল রেকর্ড ধরে রাখার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে। তা ছাড়া তিতের
হাতে বিকল্পেরও অভাব নেই। আসলেই কি তা-ই? নেইমারে
র ওপর হয়তো ২০১৪ বিশ্বকাপের মতো নির্ভরতা নেই, তারপরও নেইমারের বিকল্প কি আছে ব্রাজিলের এই দলে?
হয়তো নেই। নেইমারের প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স হয়তো মাঠ
আলো করে ফেলার মতো ছিল না, তারপরও যা করেছেন,
তা সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিলেন তিতে।
রিচার্লিসনের প্রথম গোলটা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শট গোলকিপার
ফিরিয়ে দেওয়ার পর ফিরতি বলে। এর আগেও একটু ঘটনা ছিল।
বক্সে ঢুকে নেইমারের দৌড় আর শরীরের ঝাঁকুনিতেই বলটা ভিনির
কাছে গিয়েছিল। নেইমার-মাহাত্ম্য বোঝাতে তিতে আরেকটু যোগ করলেন,
নেইমারের মতো প্রতিভারা মাঠে দু–তিনটি এমন মুহূর্ত তৈরি করেই পার্থক্য গড়ে দেন।
নেইমারকে ছাড়াই আপাতত রণপরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে।
তিতে আশা করছেন, পরের প্রজন্মের কেউ না কেউ সুযোগটা
কাজে লাগাবে। সম্ভাব্য নামগুলোও থাকল তাঁর কথায়।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের কথা বললেন, রিচার্লিসনের কথা, এলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও রাফিনিয়াও।
তিতে তো আশা করবেনই। যাঁদের কথা বলেছেন, সেই আশা
মেটানোর সামর্থ্যও তাঁদের আছে। তারপরও নেইমার তো নেইমারই।
যাঁকে নিয়ে একটু অপরাধবোধও আছে ব্রাজিল শিবিরে।
চোট পাওয়ার পরও প্রায় ১১ মিনিট খেলে গেছেন নেইমার।
অ্যাঙ্কেলের অবস্থা তাতে নিশ্চয়ই আরও খারাপ হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে তুলে না নেওয়ার দায়ও মাথা পেতে নিয়ে
নিলেন তিতে। যদিও বারবার বললেন, ‘আমি বুঝতেই পারিনি,
ও চোট পেয়েছে। আমাকে কেউ বলেওনি। ও পড়ে যাওয়ার পর আমি বুঝেছি।’
ব্রাজিলের বিপক্ষে ১২টি ফাউল হয়েছে, এর ৯টিই করা হয়েছে নেইমারকে।
এটা নিয়েও ক্ষোভ আছে তিতের। তার চেয়ে বেশি দুঃখ,
‘আপনি যদি উপভোগ্য খেলা দেখতে চান, তাহলে এসব ফাউল নিয়ে
ভাবতে হবে। নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে টার্গেট করা হচ্ছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।’
শুধু নেইমারই নন, সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেই চোট পেয়েছেন রাইট ব্যাক দানিলো। তাঁর চোটও অ্যাঙ্কেলেই। তিতে সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন শুধু একভাবেই। নেইমার-দানিলোর চোটটা প্রথম ম্যাচেই। নকআউট পর্বের অগ্নিপরীক্ষায় তাঁদের ফিরে পাওয়ার আশা তো করাই যায়।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন