• সোম. জুন ৫, ২০২৩

পড়াশোনার নানা সুযোগ কাতারে 

ডিসে ২৬, ২০২২

পড়াশোনার নানা সুযোগ কাতারে

ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল।

বাবার ইচ্ছায় ২০১৪ সালে যখন গাছ-পাহাড়ে ঘেরা ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হই,

তখন মফস্‌সলের ছোট্ট ছেলেটার সামনে খুলে যায় অনেক সম্ভাবনার দরজা।

ধীরে ধীরে জমতে থাকা টুটাফুটা তথ্য (জ্ঞান না বলি), আর জিজ্ঞাসার

জোয়ারে কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে মানুষের অস্তিত্ব, মন, সমাজকে গভীরভাবে

জানার ইচ্ছা মনের ভেতর জেঁকে বসে। স্বপ্ন দেখা শুরু করি,

বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোথাও পড়ব। শুরু হয় পরিকল্পনা।

মাঝপথে বাবার অসুস্থতার কারণে একটু থমকে গিয়েছিলাম।

কোনো কিছুই যেন পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছিল না। করোনাকালে

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই তুরস্কের সরকারি বৃত্তি

পেয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে দিই। কিছুদিন পর বাবা যখন সুস্থ হয়ে

উঠল, তখন আমার তুরস্কে যাওয়ার বার্তা এল। সিদ্ধান্ত নিলাম, যেহেতু

সরকার খরচ বহন করবে, সুতরাং তুরস্কেই নাহয় উচ্চশিক্ষাটা শুরু

করে দিই। অবসরে নাহয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির প্রস্তুতি চালিয়ে যাব।

কোরিয়া, হাঙ্গেরি, চীন, হংকংসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম।

শেষ পর্যন্ত আমার ঠাঁই হয়, নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতার ক্যাম্পাসে।

এখন এখানেই সাংবাদিকতা ও মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিষয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ছি।

কেন নর্থওয়েস্টার্ন কাতার বেছে নিলাম

একে একে সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কর্ভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেস্ট, হংকং ইউনিভার্সিটি, পিকিং, সিংহুয়া, নটরডেম এবং নর্থওয়েস্টার্নে ভর্তির সুযোগ আসার পর কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম।

সব দিক বিবেচনা করে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতার ক্যাম্পাস বেছে নিই।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্য দুটি ক্যাম্পাস যুক্তরাষ্ট্রের ইভ্যানস্টন ও শিকাগোতে।

নর্থওয়েস্টার্ন বেছে নেওয়ার বড় কারণ ছিল এর শিক্ষার মান।

এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১টিই নয়, বরং সারা বিশ্বেই এর একটা ভালো অবস্থান আছে।

কাতার ক্যাম্পাস বেছে নিয়েছিলাম কারণ এখানে আর্থিক সহায়তার (ফিন্যান্সিয়াল এইড) পরিমাণ ভালো ছিল।

কাতার সরকারের সহযোগিতায় পড়ালেখার সব খরচ কাতার ফাউন্ডেশনই বহন করছে।

শিক্ষার মানের কথা এলেই চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণার

মান, শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণার প্রভাব, আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও

শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং চাকরির বাজারে অ্যালামনাইদের চাহিদার কথা।

গবেষণা ও একাডেমিক খাতে অর্থ ব্যয় করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর

মধ্যে নর্থওয়েস্টার্নের অবস্থান ওপরের দিকে। তা ছাড়া কাতার ফাউন্ডেশন

প্রতি বছরই গবেষণা সহায়তা দিচ্ছে। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গবেষণার মান বেশ ভালো।

স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম বছর থেকেই গবেষণায় উৎসাহ ও প্রণোদনা

দিতে আছে ‘অফিস অব আন্ডারগ্র্যাজুয়েট রিসার্চ’। ভাষা শিক্ষার জন্য

পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারের (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) অনুদান দেওয়া হয়।

আছে সমপরিমাণ অঙ্কের ‘ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভ্যান্সড স্টাডি ইন দ্য গ্লোবাল সাউথ ফেলোশিপ’।

গ্রীষ্মকালীন গবেষণার জন্য চার হাজার ডলারের (প্রায় চার লাখ টাকা) গবেষণা অনুদানসহ নানা রকম অনুদান দেওয়া হয়।

আমি এখন এখানকার শিক্ষক, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো প্রফেসর

খালেদ হারুবের সঙ্গে গ্লোবাল সাউথ নিয়ে তাঁর একটি প্রকল্পে গবেষণা

সহযোগী হিসেবে কাজ করছি। পাশাপাশি আরবি শিখতে জর্ডানের আম্মানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কাতারে ১২ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এডুকেশন সিটি।

সেখানে অবস্থিত ছয়টি বৈশ্বিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নর্থওয়েস্টার্ন।

এখানে কেবল সাংবাদিকতা, যোগাযোগ এবং লিবারেল আর্টস পড়ানো হয়।

অন্য পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার সুযোগ।

যেমন জর্জটাউনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কর্নেলে মেডিসিন এবং কার্নেগি মেলনে

কম্পিউটার বিজ্ঞান, ব্যবসা ও জীববিজ্ঞান, টেক্সাস

এঅ্যান্ডএমে প্রকৌশল ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়া যায়।

পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়।

পড়ালেখার পুরো খরচই সাধারণত আর্থিক সহায়তার অধীনে পড়ে।

এ ছাড়া আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মার্কিন ক্যাম্পাসে এক সেমিস্টার পড়ার সুযোগ।

ক্যাম্পাসের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে রয়েছে লিড প্লাটিনাম সনদপ্রাপ্ত

বিশ্বমানের আবাসনব্যবস্থা, বিনা মূল্যে যোগাযোগব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত

পার্ক, অশ্বারোহণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ, গলফ মাঠ,

সায়েন্স টেক পার্ক, কাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কাতার ন্যাশনাল

কনভেনশন সেন্টার, আরব মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট, বিশ্বমানের রিক্রিয়েশন সেন্টারসহ নানা কিছু।

কাতার ফাউন্ডেশনে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বা অন্যান্য খণ্ডকালীন চাকরির

মাধ্যমে ভালো অঙ্কের অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে। দ্রুত বর্ধনশীল এবং

উন্নত অর্থনীতি হওয়ায় বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বৈতনিক বা

অবৈতনিক ইন্টার্নশিপও (শিক্ষানবিশ) করেন অনেকে।

আমি যেমন গত এক মাস বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ফক্সে ইন্টার্নশিপ করেছি।

পড়াশোনা শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন গণমাধ্যম,

করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছে।

যেমন এ বছর রোডস স্কলারশিপ নিয়ে অক্সফোর্ডে পড়তে যাচ্ছেন চতুর্ষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী।

কয়েক বছর পর হয়তো এমন করেই আমার পালা আসবে, পাড়ি জমাব নতুন কোনো ক্যাম্পাসে।

তখন নাহয় আবার লিখে জানাব আমার অভিজ্ঞতা।

আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন