ফারদিনকে কেন হত্যা করা হলো কিছুই জানি না: আবুল হায়াত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা
এবং প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তাঁরা।
কেউ কেউ এর মধ্যেই চাকরি করছেন, কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন,
কেউবা ভাবছেন ভিন্ন কিছু করার কথা। সব সময় তাঁদের পাশে
থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বুয়েটের জিমনেটরিয়ামে
আয়োজিত ‘নবাগত সংবর্ধনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি ছিল নবীন-প্রবীণের এক মিলনমেলা।
এই অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালে স্থাপত্য, ২০১৬ সালে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা
এবং ২০১৬ সালে বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক সম্পন্ন
করা শিক্ষার্থীদের নবাগত অ্যালামনাই হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়।
প্রথমবারের মতো এ রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র ও নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘বুয়েটে এলেই যে কথাটি সব সময় প্রথম মনে পড়ে,
সেটা হলো আমারই প্রাণপ্রিয় হল শেরে বাংলা হলের ছাত্র আবরার ফাহাদের কথা।
আমরা যখন (হলের) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করি, তখন আবরারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।
একটি টি-শার্ট প্রেজেন্ট করে সে আমাকে বলে, “স্যার, আপনার সঙ্গে একটা ছবি তুলি?”
তারপর যে কদিন আমরা অ্যালামনাই করেছিলাম, প্রতিদিনই দেখা হতো।
তারপরের ঘটনা…কী নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।
এর পেছনে কার প্ররোচনা ছিল, কারা এর হোতা—সেগুলো আমরা আজও জানতে পারলাম না।
কিন্তু একটা বিচার হয়ে গেল। জানি না, সেই বিচারের শেষ কোথায় আছে।
কয়েক দিন আগে বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূর নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন।
তাঁকে কেন হত্যা করা হলো, আমরা কিছুই জানি না।’
পরে নবাগত অ্যালামনাইদের অভিনন্দন জানান আবুল হায়াত।
অনুষ্ঠানে নতুন আর পুরোনো মিলে অদ্ভুত আবহ সৃষ্টি হয়েছে বলেন তিনি।
নতুনের উদ্দীপনা আর পুরোনোর অভিজ্ঞতা মিলে মাইলফলক তৈরি করা যায় বলেন তিনি।
যৌথ মিলন অত্যন্ত কার্যকরী সভা তিনি বলেন।
আবুল হায়াত আরও বলেন, ‘আপনারা হয়তো ভাবছেন যে গত চার বছর
ধরে আপনারা একটা স্রোতস্বিনী নদীতে বসবাস করেছেন।
এই নদীর স্রোতে আপনারা অনেক রকম আপদ-বিপদ কাটিয়েছেন।
সেখান থেকে এসে আপনারা পড়লেন সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ের মধ্যে।
এই ঢেউ আপনারা সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আপনাদের
মনে একধরনের শঙ্কা তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আমি বলব,
আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খেলেও আমরা আপনাদের বাঁচিয়ে নিয়ে আসব।
বড় ভাইয়েরা আপনাদের পাশে আছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি
ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
নবাগত অ্যালামনাইদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ছাত্রত্ব ঘুচিয়ে যারা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীর তালিকায় নাম লিখিয়েছে, তাদের অভিনন্দন জানাই।
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি একটা গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি।
তোমরা জীবনের একটা প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করলে।
এরপর তোমাকে বেছে নিতে হবে কোন দিকে যাবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজের ফারদার ক্যাপাসিটি গড়ে তুলতে পার কিংবা
অন্য বিষয় ভালো লাগলে সেদিকেও চলে যেতে পার।’
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও বাড়ানোর আহ্বান জানান আইনুন নিশাত।
এতে তাঁরা সহযোগিতা করবেন ও বুয়েটের সুনাম রক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকবেন বলেও জানান তিনি।
আইনুন নিশাত আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা কাজ হবে
কন্টিনিউইং এডুকেশন চালু করা, যা আমাদের দেশে নেই। নতুন প্রযুক্তি
ও বিষয় আসবে, বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিল্ড আপ
(নির্মাণ) করার জন্য কন্টিনিউইং এডুকেশনে প্রোগ্রাম রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির জন্য
বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘বুয়েট একটা পরিবার। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠের সঙ্গে সর্বকনিষ্ঠের যোগসূত্র থাকে।
এখানে কোনো গ্যাপ (দূরত্ব) থাকে না। আমাদের গ্যাপ হলো কমিউনিকেশন
গ্যাপ (যোগাযোগের অভাব), আমরা কেউ কাউকে চিনি না।
এই গ্যাপ থাকলে চলবে না, এটা পূরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের
জব প্লেসমেন্ট (চাকরির সুযোগ) করে দেওয়া এবং ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামের
মধ্য দিয়ে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রির (শিল্প) সঙ্গে অ্যাটাচ (যুক্ত) করে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব।
আমাদের দেশে সেটা নেই। এটি করার জন্য বুয়েট নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।
অ্যালামনাইদের কাছে আমরা টাকাপয়সা চাইছি না, চাই তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা।’
বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান উপাচার্য।
বুয়েটের সহ-উপাচার্য আবদুল জব্বার খান বলেন, বুয়েটকে তাঁরা নতুন উচ্চতায় নিতে চান।
এ জন্য একাডেমিক মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বুয়েটকে সেন্টার অব এক্সেলেন্সে পরিণত করা।
আমরা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে হাত দিয়েছি। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমরা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছি।
আশা করছি, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ বুয়েটের মোট বিদ্যুৎ-চাহিদার
অন্তত ৫০ শতাংশ সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে উৎপাদিত হবে।
এর মাধ্যমে বছরে বুয়েটের প্রায় ৬০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।’
প্রকৌশলী ইমু রিয়াজুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের
মধ্যে কনফিডেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম,
বুয়েট অ্যালামনাইয়ের মহাসচিব প্রকৌশলী মাহ্তাব উদ্দিন,
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান
এবং নবাগত অ্যালমানাই নাজমূল হাসান চৌধুরী ও সৃষ্টি রায় চৌধুরী বক্তব্য দেন।
আলোচনা পর্ব শেষে নবাগত অ্যালামনাইদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
পরে গানের দল ‘লালন’-এর অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ব্যানার, ফেস্টুন ও বর্ণিল আলোকসজ্জায়
সাজানো হয়েছিল বুয়েট জিমনেটরিয়ামকে। নবীন-প্রবীণ অ্যালমানাইদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল অনুষ্ঠানটি।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন