ফ্রি কিকের কেরামতিতে প্রতিপক্ষকে যেভাবে বোকা বানায় প্রতিপক্ষ
ফুটবলে সেটপিস মুভমেন্টের গুরুত্ব অজানা নয়। যে দলের সেটপিস মুভমেন্ট শক্তিশালী, ওই দলকে বাড়তি গুরুত্ব দেয় প্রতিপক্ষরা।
প্রতিবার বিশ্বকাপেই সেটপিস মুভমেন্টের নতুনত্ব বা বৈচিত্র্য দেখা যায়।ব্যতিক্রম নয় কাতার বিশ্বকাপও।
আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রিকিকে দেখা গেছে নতুনত্ব।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়েরও একদম শেষ বেলায় আর্জেন্টিনা বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পায় নেদারল্যান্ডস।
ম্যাচের এক দম শেষ সময় এই রকম জায়গায় ফ্রি কিক পেলে পিছিয়ে থাকা দল সাধারণত সরাসরি গোল করার চেষ্টা করে।
কিন্তু তা করেনি নেদারল্যান্ডস। কুপমেইনার্স গোল লক্ষ্য করে শট না
মেরে পাশ দেন আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের তৈরী করা মানব প্রাচীরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সতীর্থ উইঘর্স্টকে।
তিনি আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডারদের বাধা অতিক্রম করে দুরন্ত শটে সমতা ফেরান। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
নেদারল্যান্ডসের ফ্রি কিক নেয়ার এই অভিনব কৌশল বোকা বানিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে।
লিওনেল মেসিরা ও সময় এমন ফ্রি কিক আশা করেননি।
শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জিতলেও নেদারল্যান্ডসের ফ্রিকিক নেয়ার কৌশল নিয়ে চলছে আলোচনা।
আগেও একাধিক বিশ্বকাপে বিভিন্ন দলকে অভিনব কৌশলে ফ্রি কিক নিতে দেখা গিয়েছে।
১৯৯৪ বিশ্বকাপে অনবদ্য ফুটবল উপহার দিয়েছিল সুইডেন। তৃতীয় স্থানে শেষ করেছিল তারা।
রোমানিয়ার বিরুদ্ধে সুইডেনের স্ট্রাইকার টমাস ব্রোলিন দুরন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি কিক নিয়েছিলেন।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার জেভিয়ার জানেত্তির নেয়া ফ্রি কিকও বিস্মিত করেছিল।
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে কেন্দ্র করেই সেবার আক্রমণ তৈরি করছিলেন আর্জেন্টাইনরা।
একটি ফ্রি কিকের সময় বাতিস্তুতা দ্রুত গতিতে ইংল্যান্ডের বক্সে উঠছিলেন।
তাকে আটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইংল্যান্ডের একাধিক ফুটবলার।
বাতিস্তুতার দিকে বল বাড়ানোর ভঙ্গি করলেও জানেত্তি বল দেন ফাঁকায় থাকা সেবাস্তিয়ান ভেরনকে।
তিনিও বাতিস্তুতাকে বল দেয়ার ভঙ্গি করে বোকা বানিয়ে দেন ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের।
ফ্রি কিক নিয়েই দ্রুত বক্সে পৌঁছানো অরক্ষিত জানেত্তিকেই আবার বল ফিরিয়ে দেন ভেরন।
সহজেই গোল করেছিলেন জানেত্তি। আর্জেন্টিনার এই কৌশল বুঝতেই পারেননি ইংল্যান্ডের রক্ষণ ভাগের ফুটবলাররা।
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে পেরুর বিরুদ্ধে ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক পেয়েছিল বুলগেরিয়া।
পেরুর চারজন ফুটবলার মানব প্রাচীর তৈরি করেছিলেন যাতে গোলপোস্টের ডান দিক দিয়ে গোল না হয়।
বাঁ দিক আগলানোর দায়িত্ব নেন গোলরক্ষক। বুলগেরিয়ার ডিনকো ডারেন্ডজ়
মানব প্রাচীরের ডান দিকে ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করে পেরুর অন্য ফুটবলারদের ব্যস্ত রেখেছিলেন।
যিনি ফ্রি কিকটি নেন, তিনি ডারেন্ডজ়কে বল না দিয়ে হঠাৎ পিছন থেকে উঠে আসা অন্য এক ফুটবলারকে বল দেন।
তাতে বিভ্রান্ত হয়ে যান পেরুর ফুটবলাররা। পিছন থেকে উঠে আসা
ফুটবলার গোলে শট নেয়ার ভান করলেও ততক্ষণে অরক্ষিত হয়ে
যাওয়া ডারেন্ডজ়কেই আলতো টোকায় বল দেন। গোল করতে ভুল করেননি ডারেন্ডেজ।
ফ্রি কিক নেয়ার অভিনব কৌশল দেখিয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনাল্ডিনহোও।
২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরদ্ধে গোলের ৩৫ গজ দূরে মাঠের ডান প্রান্ত থেকে অনবদ্য ফ্রি কিক নেন।
এক সতীর্থকে বল দেয়ার বদলে শেষ মুহূর্তে গোল লক্ষ্য করে ভাসানো শট নেন।
ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ডেভিড সিম্যানকে বোকা বানিয়ে বাঁ পোস্টের কাছ দিয়ে বল ঢুকে যায় গোলে।
রোনাল্ডিনহোর নেয়া শটে বল এতটাই বাঁক খেয়েছিল যে তা আন্দাজ করতে পারেনি সিম্যান।
ডেভিড বেকহ্যাম, রবার্তো কার্লোস, লিওনেস মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোরা ফ্রিকিক থেকে সরাসরি গোল করার জন্য বিখ্যাত।
তাদের বাঁক খাওয়ানো শট বহুবার সব বাধা অতিক্রম করে গোলে ঢুকেছে।
বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে তাদের মতো দক্ষ ফুটবলাররা ফ্রিকিক নিলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকেন প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা।
কিন্তু সব দলে এমন দক্ষ ফুটবলার থাকে না। ওই দলগুলো ফ্রিকিকের সুফল পেতে বিভিন্ন রকম কৌশল নেয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন