আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এমন কথা জানান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র।
বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে এবং দেশটি বাংলাদেশের একক বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্যস্থল।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কোটি কোটি ডোজ টিকা অনুদান দিয়েছে তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী বাংলাদেশ।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বিভিন্ন নীতি-নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে থাকে।
আপনার আগে এ দেশে নিযুক্ত সব মার্কিন দূতই নির্বাচন নিয়ে আপনার দেশের অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা, রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটরা অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানালেও ২০১৪ এবং
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ‘পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন কথাটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার মানবজমিনকে দেয়া তার বিদায়ী সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক
এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়।
ভোটাররা যেন ভয়ভীতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট দিতে পারেন।’
আপনি এদেশে আসার পর থেকেই বলছেন, নির্বাচন কার্যত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আপনি বলেছেন, নির্বাচনের দিন পুরো আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের নজর থাকবে।
আপনার ভাষায় নির্বাচন যদি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কী আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের নজরে রয়েছে? এই প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, ‘হ্যাঁ।
আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় ইতিমধ্যেই বর্তমান পরিস্থিতিতে নজর রাখছে। অনেক রাষ্ট্রদূত এবং সহকর্মীরা এসব নিয়ে একই
ধরনের মন্তব্য করেছেন।’ সহিংসতা কোনো নির্বাচনের জন্যই ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারে না মন্তব্য করে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা কোনো শাস্তি নয় মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, বাহিনীর সদস্যদের আচরণ
পরিবর্তনের জন্যই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
শিগগিরই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। তবে বাহিনীটিতে সংস্কার আনলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, আমি এখানে আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র দুটি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের দেশের স্বতন্ত্র নীতি রয়েছে।
তাইওয়ান প্রশ্নে ‘এক চীন নীতি’র কথা বলেন পিটার হাস। ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেয়া না দেয়ার কোনো
বিষয় নেই উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘এটা কোনো ক্লাব নয়। এটা একটি নীতি।’
বাংলাদেশ একই সঙ্গে আইপিএস এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এ যোগ দিতে পারে কিনা- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি
জানান, এটা সাংঘর্ষিক নয়। তবে, এটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা বাংলাদেশের বিষয়।
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যদি ত্রুটিপূর্ণ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন দূত বলেন, কূটনীতিক হিসেবে আমরা অনুমাননির্ভর কোনো কিছুর জবাব দিতে পারি না।
নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধনী বিষয়ে ঢাকার একজন সম্পাদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন