বিশ্বকাপের উদ্বোধনী মঞ্চের নায়ক কে এই আইসক্রিম ব্যবসায়ী ঘানিম?
ফুটবল মহারণ ‘বিশ্বকাপের’ পর্দা উঠল রবিবার।
জমকালো উদ্বোধনী আয়োজনে সব কিছু ছাপিয়ে যিনি
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেন তিনি ঘানিম আল মুফতাহ।
দু’হাতে ভর দিয়ে মঞ্চে এসে মার্কিন অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের সঙ্গে
সঞ্চালনা করলেন বেশ কিছুক্ষণ। ঘানিম কাতার বিশ্বকাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডার।
তিনি কোরআন থেকে তেলাওয়াত করলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। কিন্তু কে এই ঘানিম আল মুফতাহ?
২০০২ সালের ৫ মে জন্ম গ্রহণ করেন ঘানিম আল মুফতাহ।
সে হিসেবে তার বয়স এখন ২০ বছরের কিছু বেশি। জন্ম থেকেই দুটি পা নেই ঘানিমের।
মায়ের পেট থেকেই বিরল রোগ কডাল ডিজেনেসিস সিন্ড্রোম
(সিডিএস) ভুগছিলেন তিনি। এই রোগ নিয়েই জন্ম হয় তার।
খুব কম মানুষেরই এই রোগ দেখা যায়। কিন্তু সেই সব বাধা
টপকে এখন বহু মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ঘানিম।
তার ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তিনি মানুষকে
অনুপ্রেরণা দিতে বিভিন্ন কথা বলেন। তার আইসক্রিমের ব্যবসাও রয়েছে।
রবিবার অভিনেতা ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতালেন ঘানিম।
তিনি কোরআন তেলাওয়াত শোনালেন মাঠে উপস্থিত দর্শকদের এবং সারাবিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের।
কাতারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল সেই অনুষ্ঠানে।
প্রথমেই দেখা যায় কাতারের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন
রশিদ আল-মাখতুমকে। প্রথমে গানের অনুষ্ঠান হয়।
তারপরেই বিশ্বকাপে ঐক্যের বার্তা শোনাতে শোনাতে হাজির হন
হলিউড অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যান। তার সঙ্গে মঞ্চে প্রবেশ করেন বিশেষভাবে সক্ষম ঘানিম।
গাইলেন কোরীয় ব্যান্ড বিটিএস-এর প্রধান গায়ক জান কুক।
তার সঙ্গেই এলেন কাতারের গায়ক ফাহাদ আল-কুবায়সি।
এর আগের বিশ্বকাপে যে যে গানগুলো গাওয়া হয়েছিল, সেগুলোও ফিরে এল।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে রিকি মার্টিনের গাওয়া ‘ওলে, ওলে’ থেকে
২০১০ বিশ্বকাপে শাকিরার গাওয়া ‘ওয়াকা, ওয়াকা’, সবই শোনা গেল।
আগের বারের বিশ্বকাপে যেসব ম্যাসকট ছিল, তাদেরও একে একে হাজির করানো হল।
ঘানিম আল মুফতাহ সম্পর্কে আরও যা জানা যাচ্ছে
শারীরিক বিরল জটিলতা স্বত্ত্বেও বর্তমানে কাতারের অন্যতম
প্রতিষ্ঠিত এবং বিখ্যাত একজন ব্যক্তি ঘানিম আল মুফতাহ।
কারণ, তার হাত ধরেই বেজে উঠল ফিফা বিশ্বকাপের দামামা।
ঘানিম আল মুফতাহ’র শরীরের নিচের অংশ নেই। জন্মের আগেই
দুটি পা হারিয়ে ফেলেন তিনি। কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম (সিআরএস)
বা কডাল ডিজেনেসিস সিন্ড্রোম (সিডিএস) রোগে আক্রান্ত ঘানিমের
শরীরের নিম্নাংশ না থাকা সত্বেও তিনি গোটা কাতার তথা আরব দুনিয়ার
একজন রোল মডেল। আরবের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে তার ভক্ত ও সমর্থক।
ঘানিম একজন জনপ্রিয় মোটিভেশনাল স্পিকার। তার বক্তব্যের
মাধ্যমে উজ্জীবিত ও বর্ণময় হয়ে ওঠে হাজার বর্ণহীন জীবন।
ঘানিম যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন, তখনই আলট্রা-সাউন্ড মেশিনে ধরা
পড়ে তার শরীরের অবিকশিত অংশ। ডাক্তার গর্ভপাতের পরামর্শ দেন
তার পরিবারকে। কারণ, অপূর্ণাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেয়ে তাকে জঠরে হত্যা করেই দেওয়া শ্রেয়।
কিন্তু ঘানিমের বাবা-মা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করেননি।
কারণ, ইসলামের অনুশাসন মোতাবেক গর্ভপাত হল চূড়ান্ত অপরাধ।
ঘানিমের মা ‘ইমান-উল-আবদেলি’ এবং বাবা ‘মুহাম্মদ আল মুফতাহ’
এটাকে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিয়ে বিকলাঙ্গ সন্তানের
জন্ম দিলেন। ঘানিমের মা তার স্বামীকে উদ্দেশ করে বলেন,
“আমি হব সন্তানের বাম পা, আর তুমি হবে ওর ডান পা।
আমরা দু’জনে আমাদের সন্তানকে কখনও নিম্নাংশের অভাব টের পেতে দেব না। ”
মা-বাবার এই সিদ্ধান্তের ২০০২ সালের ৫ মে পৃথিবীর আলো
দেখেন ঘানিম। শিশুকাল থেকেই পদে পদে সামাজিক বঞ্চনার শিকার
হন ঘানিম। স্কুল, খেলার মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় তাকে অপমানিত হতে হয়।
কিন্তু তিনি এসবের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতেন নিজ পথে,
একেবারে নিজস্ব ছন্দে। বন্ধুদের বোঝাতেন- তার অসম্পূর্ণ শরীরের জন্য
তিনি মোটেও দোষী নন। বরং আল্লাহ তাকে যে পরিমাণ
অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়ে পাঠিয়েছেন, এর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ।
নিজের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধবকে এসব বোঝাতে বোঝাতে
নিজের অজান্তেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন মোটিভেশনাল স্পিকার।
একদিন যার ভুমিষ্ট হওয়া নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ ছিল, সেই
ঘানিমের হাতেই উদ্বোধন হল বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এক প্রতিযোগিতার আসর।
কাতারের ২০ বছর বয়সী এই প্রতিবন্ধী যুবক আজ
সেদেশের শান্তির দূত হিসেবে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেলেন।
এছাড়া তিনি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবেও আরব দুনিয়ায় সমাদৃত।
সূত্র: ঘানিম আল মুফতাহ, ডেইলি মেইল, গাল্ফ টাইমস, তাকরিম, মাকতুব মিডিয়া, মাইনিউজ ঘানা
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন