বৃত্ত ভাঙতে পারবে কি যুক্তরাষ্ট্র
টোটাল ফুটবলে বিশ্ব মাতানো ইয়োহান ক্রুয়েফের সেই দল
তো দূরের কথা, গুলিত-বাস্তেনদের মানের টিম নয়ও
এবারের নেদারল্যান্ডস। তার পরও এই দল নিয়ে বিশ্বকাপ
জয়ের স্বপ্ন দেখছেন নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন গাল। সে
স্বপ্নপূরণের পথে শেষ ষোলোতে আজ তাদের প্রতিপক্ষ
যুক্তরাষ্ট্র। ২৩ বছরের টেলর অ্যাডামসের নেতৃত্বে একঝাঁক
তরুণ নিয়ে গড়া এবারের যুক্তরাষ্ট্র দল। নকআউট বলেই
তারুণ্যনির্ভর দলটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে ডাচদের সামনে।
ইউরোপীয়দের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস মোটেও সুখকর নয়।
বিশ্বকাপে গত কুড়ি বছরে কোনো ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে
জয় পায়নি তারা। ছয়টি ড্র করেছে এবং পাঁচটিতে হেরেছে।
আর নকআউটে ইউরোপীয়দের বিপক্ষে তিন ম্যাচের তিনটিতেই
হেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডাচরা তো বিশ্বকাপে ইউরোপের বাইরের দেশের
কাছে হারা ভুলেই গেছে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে ব্রাজিলের
কাছে ৩-২ গোলে হারার পর ১৯ ম্যাচ ইউরোপের বাইরের দেশের
কাছে হারেনি নেদারল্যান্ডস। বিশ্বকাপে অবশ্য এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের
মোকাবিলা করবে ডাচরা। আগে মুখোমুখি হওয়া পাঁচটিই ছিল প্রীতিম্যাচ।
যার মধ্যে চারটি জিতেছিল নেদারল্যান্ডস। সর্বশেষটি
জিতেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে ৪-৩ গোলে জিতে ডাচদের চমকে
দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আজও কী তেমন কিছু করতে
পারবেন অ্যাডামস-পুলিসিচরা!
৭১ বছর বয়সী লুই ফন গাল এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো
নেদারল্যান্ডসের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৪ সালে ব্রাজিলে তাঁর কোচিংয়েই সেমিফাইনালে খেলেছিল ডাচরা।
তবে লুই ফন গাল এই দলটিকে এগিয়ে রাখছেন। এর
পেছনে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, এই দলে লিভারপুলের
সেন্টার-ব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক ও বার্সেলোনার
মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি জংয়ের মতো বড় তারকা আছেন।
তাঁদের সঙ্গে কোডি গ্যাকপোর মতো দুর্দান্ত ছন্দে থাকা
তরুণ প্রতিভা রয়েছে, গ্রুপ পর্বে প্রতি ম্যাচে যিনি গোল
করেছেন। তাঁর আশাবাদী হওয়ার আরেকটি কারণ হলো
এই দলটির ওপর খুব বেশি প্রত্যাশার চাপ নেই। ব্রাজিল,
আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের মতো তাঁদের নিয়ে এত
হাইপ না থাকায় চাপমুক্ত হয়ে তাঁরা খেলতে পারছেন
বলেও মনে করছেন কোচ। দুই জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’
গ্রুপের সেরা হয়েই নকআউট পর্বে এসেছে ডাচরা। যদিও
তাদের খেলায় সমর্থকদের মন ভরেনি। গ্রুপ পর্বের তিন
ম্যাচে প্রতিপক্ষের পোস্টে মাত্র আটটি শট নিতে পেরেছে
নেদারল্যান্ডস। এ বিষয়টা তুলে ধরে গতকালের সংবাদ
সম্মেলনে ডাচদের খেলার স্টাইলের সমালোচনাও হয়।
ফন গাল সমালোচকদের প্রতি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন,
‘২০১৪ বিশ্বকাপেও আমরা ঠিক একইভাবে এগিয়ে গিয়েছিলাম।
কোনো পার্থক্য ছিল না। কিন্তু এবার নেতিবাচক কথা বেশি হচ্ছে।
আমি মনে করি আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। আপনি অভিমত
ব্যক্ত করতেই পারেন। তবে আমি মনে করি, আপনার অভিমত
সঠিক নয়।’ তিনি আরও যোগ করেন. ‘আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
হতে চাই। এজন্য আমাদের আরও চারটি ম্যাচ জিততে হবে।’
প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকেও সমীহ করেছেন তিনি, ‘তারা যে টুর্নামেন্টের
অন্যতম সেরা দল, সেটা তারা এরই মধ্যে প্রমাণ করে ফেলেছে।
কঠিন লড়াই হবে বলেই মনে করছি। তাই বলে আমরা জিততে পারব না, এমনটাও নয়।’
‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ হিসেবে পরিচিত ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় তারকা। ইরানের বিপক্ষে তাঁর
গোলেই নকআউট নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবারের
বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণভোমরা হচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী
টেলর অ্যাডামস। ডিফেন্সিভ এ মিডফিল্ডারকে
অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন
যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বারহল্টার। দলের ডিফেন্ডার অ্যারন
লং তাঁকে ‘সিংহ হৃদয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর
নেতৃত্বেই পুলিসিচ, ম্যাককেইন, উইয়াহদের মতো একঝাঁক
তরুণ কাতারে দারুণ ফুটবল খেলছে। চেলসি তারকা
পুলিসিচের অবশ্য হালকা চোট রয়েছে। তবে তিনি মাঠে
নামতে মরিয়া বলে জানিয়েছেন কোচ।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন