ব্রাজিলের ‘অদৃশ্য মানব’ কাসেমিরো
তিনি নিজে ছিলেন ‘অদৃশ্য মানব’। এগারোজনের একজন হয়ে মাঠে নামতেন।
কিন্তু প্রতিপক্ষ তাঁকে খুঁজে পেত না। যে মঞ্চে তাঁর ‘অদৃশ্য মানব’
হিসেবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠা, দুই দশক পর একই মঞ্চে এবার আরেক
‘অদৃশ্য মানব’র আবির্ভাব। আর নতুন এই ‘অদৃশ্য মানব’কে খুঁজে পেয়েছেন পুরোনো সেই ‘অদৃশ্য মানব’ই।
নিশ্চয়ই হেঁয়ালি মনে হচ্ছে? কল্পবিজ্ঞান আর থ্রিলারের কোনো ‘অদৃশ্য মানব’এর গন্ধ পাচ্ছেন?
যেটিই হোক, ‘অদৃশ্য’ শব্দটা রহস্যময়ই। এই আছে এই নেই।
অন্যভাবে বললে, থেকেও না থাকা কিংবা না থেকেও থাকা।
বিশ্বকাপ ফুটবলে এমনই এক অদৃশ্য মানবের দেখা মিলেছিল
২০ বছর আগে। দুই দশকের পুরোনো স্মৃতিতে যদি ধুলার আস্তরণ
না পড়ে, তাহলে গিলবার্তো সিলভার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে।
ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপজয়ে ‘অদৃশ্য মানব’হয়ে উঠেছিলেন
এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। কাতারে এবার ‘সেলেসাও’ জার্সিতে
আরেকজন ‘অদৃশ্য মানব’ খুঁজে পেয়েছেন গিলবার্তো।
তিন অংশে গড়া নামের প্রথম দুই অংশ কার্লোস হেনরিক। ফুটবল–বিশ্ব চেনে তৃতীয় অংশ-কাসেমিরো।
২০০২ সালে ব্রাজিলের ‘পেন্টা’(পঞ্চম শিরোপা) জয়ে রোনালদো,
রিভালদোদের নামই বেশি উচ্চারিত হয়। তবে আক্রমণের সূত্র
তৈরি করে দেওয়া আর প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়ার
‘দ্বিমুখী দায়িত্ব’টা পালন করতেন গিলবার্তোই। ব্রাজিল কোচ
লুই ফেলিপে স্কলারি সেবার দুই উইং ব্যাক কাফু ও কার্লোস
রবার্তোকে আক্রমণে ওঠার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। এই দুজনের
রেখে যাওয়া জায়গা কাভার করার দায়িত্ব ছিল এডমিলসন ও গিলবার্তোর।
পায়ে বল না থাকলেও ছায়া হয়ে প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ডের পাশে
লেগে থাকতেন। এ ছাড়া ট্যাকলও খুব একটা করতেন না বলে
প্রতিপক্ষ তার উপস্থিতি কম টের পেত। আক্রমণে ওঠার সময়ই
গিলবার্তো-দেয়ালে ধাক্কা খেতেন প্রতিপক্ষ ফরোয়ার্ড।
রক্ষণে দেয়াল হয়ে ওঠার পাশাপাশি মাঝমাঠে বলের জোগান দেওয়ার কাজও ছিল গিলবার্তোর।
সব মিলিয়ে মাঠে তাঁর উপস্থিতি খুব বেশি দৃশ্যমান না হলেও
প্রভাব রাখতেন বেশি। গিলবার্তোর নাম হয়ে যায় ‘অদৃশ্য দেয়াল’।
ওই দেয়াল ব্রাজিলকে এতটাই সুরক্ষা দেয় যে নকআউট পর্বের
চার ম্যাচে মাত্র ১ গোল হজম করেছিল ব্রাজিল। ২০০২ বিশ্বকাপ
নিয়ে পরে ব্রাজিলের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ভেজা’
লিখেছিল, ‘রোনালদো আর রিভালদো যে পিয়ানোটা বাজিয়েছিলেন, সেটি বহন করেছিলেন গিলবার্তো।
সেই গিলবার্তো এবার কাতারে খুঁজে পাচ্ছেন নিজের ছায়া।
বিবিসিতে লেখা কলামে কাসেমিরোর সামনে তুলে ধরেছেন
২০ বছর আগের নিজেকে, ‘২০০২ বিশ্বকাপে আমার দায়িত্ব
ছিল অদৃশ্য হয়ে থাকা। দায়িত্বটি যদি আমি ঠিকঠাক করে থাকি,
তাহলে আমার সামনে থাকা খেলোয়াড়দের কাজ সহজ হয়ে
গিয়েছিল। একইভাবে দায়িত্বটা এখন কাসেমিরোর। ২০ বছরের
আক্ষেপ ঘোচানোর অপেক্ষায় থাকা দলের ঠিক মাঝখানটায়
আছে সে। আমার পুরোনো জায়গাটায় ওর ওপর বড় দায়িত্ব।’
গিলবার্তোর মতে, ব্রাজিলের মতো আক্রমণনির্ভর দলে ডিফেন্সিভ
মিডফিল্ডারকে সুনিপুণ হতে হয়। ধৈর্যশীল হতে হয়। এর ব্যাখ্যায়
তিনি লেখেন, ‘ব্যাপারটা এমন নয় যে সবাইকে আপনার ট্যাকল
করতে হবে। পুরো দায়িত্বের ভেতর খুব ছোট্ট একটা অংশ এটা।
আপনাকে মূলত খেলার ধারা বুঝতে হবে, কোথায় থাকতে হবে,
সেটা বুঝতে হবে। এই জায়গাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পিচের সঠিক জায়গায় থাকলে বেশির ভাগ সময় বিপদটা সহজেই
টের পাওয়া যায়। তখন খেলাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এমনকি বল স্পর্শ না করেও জায়গামতো থাকার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়।’
পায়ে যখন বল থাকে না, তখন কী করতে হবে, সেটি বুঝতে
পারাই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে পরামর্শ
গিলবার্তোর, ‘অনেককে দেখা যায়, বল না পেলে হতাশ হয়ে
জায়গা ছেড়ে দেয়। যদিও খুবই অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু ওই
সময়ের মধ্যেই তার ছেড়ে যাওয়া জায়গায় প্রতিপক্ষ সুযোগ খুঁজে নিতে পারে।’
সার্বিয়ার বিপক্ষে এ কাজই কাসেমিরো দারুণভাবে করেছে বলে
মনে করেন গিলবার্তো। আর্সেনালের ‘দ্য ইনভিন্সিবল’ দলের
এ খেলোয়াড় ব্রাজিল উত্তরসূরির খেলায় মুগ্ধ, ‘যেখানটায় থাকা দরকার,
সার্বিয়া ম্যাচে সেখানটাতেই ছিল কাসেমিরো। সেদিন বল পজেশন
বেশি ছিল বিধায় চাইলেই বারবার ওপরে উঠতে পারত সে।
কিন্তু ফাইনাল থার্ডে মাত্র একবার বল নিয়েছে সে। এই খেলাটা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষেও দরকার।’
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন