• শনি. মার্চ ২৫, ২০২৩

ভারত চীনের কাছে লাদাখের ২৬ টহল পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে

জানু ২৬, ২০২৩

ভারত চীনের কাছে লাদাখের ২৬ টহল পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে

২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীন ও ভারতের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের

মধ্য সংঘাত হয়। এরপর গত বছর অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে চীন ও ভারতের

সেনাসদস্যদের মধ্য সংঘর্ষ হয়। লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধপূর্ণ

সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই লাদাখ সীমান্তের পশ্চিম অংশে ৬৫টি টহল পয়েন্টের

মধ্যে ২৬টিতে প্রবেশের অধিকার হারিয়েছে ভারত। ভারতশাসিত লাদাখের

অন্যতম প্রধান শহর লেহর পুলিশ সুপার পি ডি নিত্যর করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ভারতীয় ওই পুলিশ কর্মকর্তা চীনের সঙ্গে ভারতের সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার

সীমান্ত এলাকা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে উদ্বেগজনক এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।

দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভি পি ডি নিত্যর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গতকাল

বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে পি ডি নিত্য

লিখেছেন, ‘বর্তমানে কারাকোরাম পাস থেকে চুমুর পর্যন্ত ৬৫টি টহল পয়েন্ট

(প্যাট্রোলিং পয়েন্ট বা পিপি) আছে। এ এলাকায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর

(আইএসএফ) সদস্যরা নিয়মিত টহল দেন। ৬৫টি টহল পয়েন্টের মধ্যে ২৬টিতে

আমাদের উপস্থিতি হারিয়ে গেছে। পিপি ৫-১৭, ২৪-৩২, ৩৭-এ ভারতের

নিরাপত্তা বাহিনীর টহল সীমিত হয়েছে অথবা কোনো টহলই নেই।’

গত সপ্তাহে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের

বার্ষিক এক সম্মেলনে লাদাখ নিয়ে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে

দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী সময়ে চীন আমাদের এ

সত্য মেনে নিতে বাধ্য করেছে যে এসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নিরাপত্তা

বাহিনী অথবা ভারতের বেসামরিক নাগরিকদের উপস্থিতি দেখা যায়নি, যে কারণে

ওই অঞ্চলে চীনারা উপস্থিত হয়েছেন। এর ফলে আইএসএফের নিয়ন্ত্রণে

থাকা সীমানা ভারতের দিক থেকে সরে গেছে এবং এ ধরনের সব পকেটে

একটি “বাফার জোন” তৈরি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলগুলোর ওপর

নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে ভারত। চীনের সামরিক বাহিনীর (পিএলএ) ইঞ্চি ইঞ্চি

করে জমি দখলের এই কৌশল “সালামি স্লাইসিং” নামে পরিচিত।’

ভারতের ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘পিএলএ উত্তেজনা

প্রশমনের আলোচনার সময় বাফার এলাকার সুযোগ নিয়ে লাদাখের সর্বোচ্চ চূড়ায়

ক্যামেরা স্থাপন করে আমাদের বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।

এমনকি তারা বাফার জোনেও আমাদের চলাফেরায় আপত্তি জানায় এবং

সেটি তাদের অপারেশন এলাকা বলেও দাবি করে। শুধু তা–ই নয়, সেখানে আরও

বাফার এলাকা তৈরির জন্য আমাদের ফিরে যাওয়ারও আহ্বান জানায় চীনের

সামরিক বাহিনী।’ তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায়

প্রাণঘাতী সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য ও ৪ চীনা সৈন্য নিহত হওয়ার পর চীনের এ কৌশল দেখা গেছে।

পি ডি নিত্য বলেন, এলাকাগুলোকে সীমান্তের বাইরের হিসেবে চিহ্নিত করা এবং

সেগুলো ফেলে রাখা সৈন্যদের মনোবলকেও প্রভাবিত করে। ভারতের জ্যেষ্ঠ এক

পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন পি ডি নিত্য। ওই পুলিশ

কর্মকর্তা লাদাখের সম্মুখসারির একটি এলাকার দায়িত্ব আছেন। আলাপচারিতার

সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যদি ৪০০ মিটার পিছিয়ে গিয়ে আমরা ৪ বছরের

জন্য পিএলএর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে পারি, তাহলে সেটি মূল্যবান।

তবে ভারত সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতের ইংরেজি

দৈনিক দ্য হিন্দুর সঙ্গে আলাপচারিতায় দেশটির এক প্রতিরক্ষাসূত্র পাল্টা দাবি

করে বলেছে, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে নেওয়া ব্যবস্থার কারণে কোনো

অঞ্চলেরই নিয়ন্ত্রণ খোয়া যায়নি। ভারতের এই দৈনিক লাদাখের টহল পয়েন্টে

দেশটির সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়ে প্রথম খবর প্রকাশ করে।

আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন