‘ ভিএআর ‘ যখন হয়ে যায় ‘ভাঁড়’
সন্ধ্যা ৭টা ১০; তা না হলে সেই রাত ৩টা ১০। দোহা থেকে
এই দুটো ফ্লাইটই মিউনিখের জন্য ছাড়বে। কিন্তু ঠিক
কোনটিতে টিকিট কনফার্ম করবেন অপেক্ষাকৃত ইয়াং
জার্মান সাংবাদিক- ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
পরামর্শ চাইছিলেন অভিজ্ঞ কলিগের কাছে। তিনি অবশ্য
টুর্নামেন্টের পুরোটা কাভার করেই যেতে বলছেন ওই
ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিককে। কিন্তু আর আগ্রহ পাচ্ছেন না ওই
তরুণ। অভিজ্ঞজনও আর ভরসা দিলেন না- ‘থেকে আর
কী হবে, ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) নিয়ে যা
শুরু হয়েছে বিশ্বকাপে। তা তুমি না হয় ক’দিন আগেই চলে
গেলে।’ গতকাল কাতার কনভেনশন সেন্টারের জার্মান দুই
সাংবাদিকের এই আলোচনাতেই উঠে আসে, কতটা হতাশ
হয়েছেন তাঁরা দলের বিদায়ে। আর সেই হতাশার সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষোভ।
স্পেনের বিপক্ষে জাপানের দ্বিতীয় গোলটিতে বল ‘ডেড’
হয়ে যাওয়ার পরও ভিএআরের সিদ্ধান্তে সেটা ঠিক ছিল।
কিন্তু বল যে গোললাইনের বাইরে গিয়েছিল এবং সেখান
থেকে ক্রস দেন কাওরো মিতোমা। আর সে বলই হাঁটুর
টোকায় জালে পাঠান তাকুমা। ম্যাচের পর সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ওপর থেকে নেওয়া ম্যাচের ওই
দৃশ্যটির যে ছবি ভাইরাল হয়েছে, তা দেখে মিডিয়া
সেন্টারের এক ব্রিটিশ বলছিলেন- মাত্র ইঞ্চি দূরত্বে আটকে
গেল জার্মানির বিশ্বকাপ! ঠাট্টা করে বললেন, নাকি মন
থেকেই বললেন, বোঝা গেল না মুখের ভঙ্গিতে। তবে ওই ম্যাচের
পর কাতারে আসা বিশ্ব মিডিয়াগুলোয় ভার এখন রীতিমতো ‘ভাঁড়’ এ পরিণত হয়েছে।
রেফারির ভুলগুলো নিয়ে হাসিঠাট্টা চলছে বেশ।
নেহাত ফিফা কিছু আইন করে দিয়েছে, তা না হলে এই
সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও খোলামেলা বিতর্ক চলত।
আসলে জাপানের দেওয়া ওই গোলটি না হলে ম্যাচটি
হয়তো স্পেনের সঙ্গে ১-১ এ ড্র হতো। তাহলে স্পেন ৫
পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা হতো। আর জাপানের হতো ৪
পয়েন্ট, সমান পয়েন্ট থাকত জার্মানিরও। সে ক্ষেত্রে গোল
ব্যবধানে জাপানকে ছাপিয়ে জার্মানি উঠে যেত নকআউটে!
শুধু ওই ভিএআরের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এখন সবই জার্মানির
হাহাকার। এমনিতে বলে চিপ লাগিয়ে এবারের বিশ্বকাপে
‘সেমিঅটোমেটেড’ প্রযুক্তিতে অফসাইড নির্ধারণ করা হচ্ছে।
কিন্তু ভিএআরের ক্ষেত্রে কিন্তু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ভিডিও রেফারি নিজে।
বেশ কয়েকটি ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
সে দিন এই দায়িত্বে ছিলেন মেক্সিকান রেফারি ফার্নান্দো গুয়েরেরো। সিদ্ধান্তটি তাঁরই ছিল।
যদিও ভার নিয়ে অন্যদের মতো হাসিঠাট্টা করতে পারছেন না জার্মানরা।
‘সত্যিই বড় বিপর্যয় হয়ে গেল। আমাদের সঙ্গে অবিশ্বাস্য সব কিছু ঘটল।
ম্যাচটিতে আমরা সবটুকু দিতে চেষ্টা করেছিলাম, যদি
স্পেন জাপানের কাছে না হারত, তাহলে হয়তো সুযোগ ছিল।
এত কিছুর পর নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। মনে হচ্ছে,
সব শক্তি ফুরিয়ে এসেছে। যদি এটাই জার্মানির হয়ে
আমার শেষ খেলা হয়, তাহলে বলব সবাইকে ধন্যবাদ।
দারুণ একটি ম্যাচ খেলেছিলাম আমরা।’ বিশ্বকাপজয়ী
জার্মান স্ট্রাইকার থমাস মুলার যখন ম্যাচ শেষে এসব
বলেন, তথন সত্যিই বড্ড অচেনা লাগছিল এই জার্মানিকে।
অন্যের ওপর তাকিয়ে কবেই বা জার্মানিকে নকআউটের
জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
কবেই বা তাদের রেফারিং নিয়ে অভিযোগ দিতে শোনা গেছে।
অবশ্য জার্মানি সেই পথে যায়ওনি।
তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গ্রিজম্যানের গোল ভিএআরে বাতিল
হয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিফার কাছে নালিশ করেছে ফ্রান্স।
দেশে ফেরার মুখে জার্মানি আর তা করেনি। জার্মান কোচ
হ্যান্সি ফ্লিক সেই পথে যানওনি। ‘আমি অন্য ম্যাচের কথা বলব না,
সেখানে কী হয়েছে তা আমি দেখিনি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি,
আমরা বেশ কিছু সুযোগ হারিয়েছি এই বিশ্বকাপে। স্পেনের বিপক্ষে
আমাদের জেতা উচিত ছিল। ওই ম্যাচটিতে পুরো পয়েন্ট পেলে হয়তো
শেষে এসে এমন সমীকরণের মুখে দাঁড়াতে হতো না।’
রাগে-ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা জার্মান মিডিয়ার সামনে এসে ফ্লিকের
এই সাদা উত্তর ধোপে টেকেনি। আপনি কবে পদত্যাগ
করবেন?- সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তরও দিতে হয়েছে। দল
সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফ্লিক উত্তর এড়িয়ে
যেতে পেরেছেন হয়তো। তবে চাকরি বোধহয় বাঁচাতে
পারবেন না। জার্মান বিপর্যয়ের দায় তাঁকেও যে নিতে হবে।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন