মূল্যস্ফীতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পরিবারের আয় কমেছে ৭,৪০০ ডলার
মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতিবিদেরা নীরব ঘাতক হিসেবে আখ্যা দেন।
কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে নীরবে-নিভৃতে মানুষের আয় কমে যায়।
চলতি বছর যেভাবে মূল্যস্ফীতির সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে,
তাতে বিভিন্ন দেশের মানুষের প্রকৃত আয় অনেকটাই কমে যাচ্ছে।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে,
উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির কর্মরত পরিবারগুলো বার্ষিক ৭ হাজার ৪০০ ডলার আয় হারাচ্ছে।
মোট আয় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করার পর পরিবার বা ব্যক্তির প্রকৃত আয় হিসাব করা হয়।
জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ঘণ্টাপ্রতি প্রকৃত আয় টানা ১৯ মাস নিম্নমুখী।
দেশটির শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএলএস) তথ্যানুসারে, গত মাসে
ঘণ্টাপ্রতি প্রকৃত আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে।
সাপ্তাহিক গড় প্রকৃত আয় হ্রাসের হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষকেরা বলেন,
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে পরিবারগুলো বছরে ৬ হাজার ১০০ ডলার আয় হারাচ্ছে।
পাশাপাশি উচ্চ সুদহারের কারণে পরিবারগুলোকে বছরে আরও প্রায় ১ হাজার ৩০০ ডলার গুনতে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে তাদের ৭ হাজার ৪০০ ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্য সূচক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
গত মাসে দেশটির মানুষের মুদি খরচ বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ—ডিমে ৪৩ শতাংশ,
কফিতে ১৪ দশমিক ৮, চালে ১৪ দশমিক ৮, রুটিতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ,
দুধে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ আর ফল ও সবজিতে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
শিশুখাদ্যের ব্যয়ও এক বছর আগের তুলনায় ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে ১৯৮০ দশকের পর এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে যুক্তরাজ্য।
গত অক্টোবর মাসে দেশটির খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে দেশটির রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম অনেকটাই বেড়েছে।
মহামারির সময় থেকে মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা চলছে।
দ্য গার্ডিয়ান–এর এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পর সে দেশে
কফি ও স্ন্যাকসের মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
রেস্তোরাঁ কর্মকর্তারা এত বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
অনেকেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে অক্টোবর মাসে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে।
দেড় বছর পরে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমেছে। সেপ্টেম্বর মাসে
দেশটিতে পাইকারি মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, অক্টোবর মাসে
তা নেমেছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশে। ইকোনমিক টাইমস–এর খবর।
এর আগে ২০২১ সালের মার্চ মাসে পাইকারি বাজারে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কম ছিল।
তবে এতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান দুশ্চিন্তা তেমন
কমাল না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। কারণ,
সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম আগের মাসের চেয়ে খুব বেশি কমেনি।
ফলে পাইকারি মূল্যস্ফীতির হার হ্রাসের প্রভাব খুচরা বাজারে কতটা পড়বে,
তা নিয়ে ধন্দে আছেন অনেক বিশ্লেষক। তাঁদের মত, এখনই স্বস্তির কারণ নেই।
তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, পাইকারি মূল্যসূচক কমে যাওয়ায়
খুচরা মূল্যসূচকও কিছুটা নিচে নামতে পারে।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে মানুষকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, এটা একধরনের বাধ্যতামূলক কর।
এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের।
বিষয়টি হচ্ছে, আগে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো,
মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ হলে সেই একই পণ্য কিনতে হবে ১১০ টাকায়,
কিন্তু এই বাড়তি ১০ টাকা আয় না বাড়লে ধরে নিতে হবে, তার আয় কমে গেছে।
এটাই সংকটের জায়গা। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের আয় হ্রাসের হিসাব পাওয়া গেলেও এই বাস্তবতা সব দেশের।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন