মেসি ম্যাজিকে স্বপ্ন পূরণের পথে আর্জেন্টিনা
শঙ্কা কাটিয়ে দীর্ঘদিনের অধরা স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলেছে আর্জেন্টিনা।
গ্রুপ পর্বেই যে দলটি বিদায় নেওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল,
তারা এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। কাতারের লুসাইল
স্টেডিয়ামে আগামী শুক্রবার রাতে শেষ আটের লড়াইয়ে
তাদের প্রতিপক্ষ টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড। ওই
ম্যাচে ডাচদের হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলতে আত্মবিশ্বাসী আলবিসেলেস্তারা।
বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা।
সেই দলটিই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি
আরবের কাছে হেরে বসে। সেই ম্যাচে হারের পর তো
অনেকে বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ও দেখেছিলেন।
সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের অপ্রতিরোধ্য ছন্দে ফিরেছে
কোচ লিওনেল স্কালোনির দল। শেষ ষোলোতে
অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারানোর পর আরও
আত্মবিশ্বাসী হয়েছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। ৩৬ বছর
পর বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে আর্জেন্টিনার প্রধান ভরসা
অধিনায়ক লিওনেল মেসি। খুদে জাদুকর প্রতিটি ম্যাচেই
চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে চলেছেন।
সকারুদের বিরুদ্ধেও তিনি একাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন।
এক মেসিকে রুখতেই অস্ট্রেলিয়ার গলদঘর্ম হয়েছে। শুধু
এই ম্যাচই নয়, যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্যই আর্জেন্টাইন
অধিনায়ক হুমকি। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে
দিতে পারেন রেকর্ড সর্বোচ্চ ছয়বারের ফিফা সেরা ও সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী তারকা।
মেসিকে নিয়ে সব প্রতিপক্ষই চাপে থাকে। এই সুযোগটা
আর্জেন্টিনা ভালোমতোই নিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে
ম্যাচটি মেসির জন্য বিশেষ কিছুই ছিল। ক্লাব ও জাতীয়
দল মিলিয়ে এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ১০০০তম ম্যাচ।
ম্যাচকে ঘিরে সারা দুনিয়ায় তার অসংখ্য ভক্তের মাঝে
কতই না উন্মাদনা বিরাজ করে। অথচ যিনি এই কীর্তি
গড়েছেন, সেই মেসি নিজেই নাকি জানতেন না এটার কথ!
এমনকি এই ম্যাচকে ঘিরে উদ্যাপনের বিশেষ কোনো
পরিকল্পনাও নেই। শেষ আট নিশ্চিত করার পর মেসি
বলেন, ‘আমি আজকেই (শনিবার) জানলাম- এটা আমার
১০০তম ম্যাচ ছিল। আমি আসলে বর্তমান নিয়ে বাঁচি।’
মাইলফলকের ম্যাচে মেসি আরেকজার জাদু দেখান।
৩৫ মিনিটে বা পায়ের নিখুঁত শটে চোখ ধাঁধানো গোল করেন।
এই গোলে একাধিক রেকর্ডও নতুন করে লিখেছেন মেসি।
রেকর্ডের একটি পাতায় ছাপিয়ে গেছেন স্বদেশী কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাকে।
বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচ খেলে ৮ গোল করেছিলেন ১৯৮৬
সালের বিশ্বকাপজয়ী ম্যারাডোনা। অন্যদিকে ২৩ ম্যাচে
মেসির গোল হয়েছে ৯টি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে
সর্বোচ্চ গোলের মালিক হতে মেসির প্রয়োজন আর মাত্র
দুটি গোল। বিখ্যাত আকাশি জার্সিধারীদের হয়ে বিশ্বকাপে
মেসির চেয়ে বেশি গোল আছে শুধু গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার
১০টি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড়
হয়েছেন মেসি। এ নিয়ে বিশ^ মঞ্চে আটবার ম্যাচ সেরার
পুরস্কার জয় করেছেন তিনি। এর ফলে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে পেছনে ফেলেছেন আর্জেন্টাইন
সুপারস্টার। সি আর সেভেন সাতবার ম্যাচসেরা হয়েছেন।
তিনে থাকা হল্যান্ডের সাবেক তারকা আরিয়েন রোবেন
আছেন তিনে। এত এত অর্জন, অথচ মেসির যেন এসব
নিয়ে কোনো ভাবনাই নেই। তার ভাবনার পুরোটাজুড়েই
৩৬ বছর পর ঘরে শিরোপা ফেরানোর দিকে।
শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়া বাধা পেরোনোর পর শেষ আটে
আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ হল্যান্ড। বলার অপেক্ষা রাখে না,
সকারুদের চেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ডাচরা। বর্ষীয়ান কোচ
লুইস ভ্যান গালের অধীন বিশ্বকাপেও দলটি দারুণ ছন্দে
আছে। যে কারণে ম্যাচটি যে কঠিন হবে এটা এক বাক্যেই
মেনে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান
রোমেরো। তবে এই পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার মতো
সামর্থ্যও দলের আছে বলে মনে করেন ইংলিশ ক্লাব
টটেনহ্যাম হটস্পারের এই তারকা। পুরো দল হল্যান্ডকে
মোকাবিলা করতে প্রস্তুত জানিয়ে রোমেরো বলেন, হল্যান্ড কঠিন প্রতিপক্ষ।
ডাচ ফুটবলারদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে।
এরই মধ্যে আমরা কিভাবে তাদের বিরুদ্ধে খেলব, তা নিয়ে
ভাবা শুরু করেছি। আমরা ২৬ জন যোদ্ধা। সবাই প্রস্তুত।
কোচ সিদ্ধান্ত নেবেন কারা খেলবেন। আমরা সবাই জীবন
দিয়ে চেষ্টা করব সব সময়ের মতো। প্রতিটি দিনের জন্যই আমরা প্রস্তুত।
কঠিন হলেও ডাচ চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিতে প্রস্তুত দল এমন
জানিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও
কোচ লিওনেল স্কালোনি। ম্যাচটি সামনে রেখে মেসি
বলেন, হল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সত্যিই কঠিন লড়াই হবে।
ওরা খুবই ভালো খেলে। ওরা চাইবে আমাদের কাছ থেকে
বল কেড়ে নিতে। আমাদের কাজটা সহজ হবে না। দারুণ
সব ফুটবলার আছে তাদের, দুর্দান্ত এক কোচ আছেন।
এটা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। এই ধাপ থেকে বিশ্বকাপ আরও কঠিনতর হতে শুরু করে।
আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনির ধারণা ম্যাচটি জমজমাট হবে।
তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী দুটি দলের লড়াই। সুন্দর একটি ম্যাচ হবে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে কোনো একটি দলকে বিদায় নিতে হবে। আশা করি, আমরাই পরের ধাপে এগিয়ে যাব।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন