যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও খার্তুমে বিমান হামলা
বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে দেওয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সুদানের
রাজধানী খার্তুমে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা
হয়েছে, তারা দেশটির আধা সামরিক বাহিনীকে (র্যাপিড রেসপন্স ফোর্স) নির্মূল করতে শহরটিতে আক্রমণ করছে।
দুই পক্ষ থেকেই তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও লড়াই তীব্র হয়েছে।
১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত
হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে নিহত ব্যক্তিদের প্রকৃত
সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। খার্তুমে লাখো মানুষ বন্দী হয়ে পড়েছেন।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং আধা সামরিক বাহিনী
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগলোর বাহিনীর
মধ্যে এই লড়াই শুরু হয়। হামদান অবশ্য হেমেদতি হিসেবেই বেশি পরিচিত।
লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের প্রচেষ্টায়
একাধিকবার অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হন বুরহান ও হেমেদতি। তবে এসব অস্ত্রবিরতির
কোনোটিই সেভাবে কার্যকর হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির মধ্যস্থতায় চুক্তির
পরবর্তী পর্যায়ে তারা কী করবে তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
গতকাল রোববার যুদ্ধ বিরতি আরও তিন দিন বর্ধিত করার আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ
থেকে বলা হয়, তারা আরএসএফের বিরুদ্ধে খার্তুমের সিটি সেন্টারের উত্তরে অভিযান চালাচ্ছে।
সর্বশেষ তিন দিনের অস্ত্রবিরতি কাল রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়। যুক্তরাষ্ট্র,
সৌদি আরব, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত
বৃহস্পতিবার এ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছিল লড়াইরত দুই বাহিনী।
তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসির হামিদ খালাফাল্লাহ খার্তুম ছেড়ে
যেতে পারেননি। তিনি সংঘাত পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যখন বিকট শব্দে
বোমা পড়ার আওয়াজ কাছাকাছি এসে পৌঁছায় তখন আমরা ঘরের ঠিক মাঝখানে
শুয়ে পড়ি।দরজা, জানালা ও দেয়াল থেকে দূরে সরে যাই। যতক্ষণ বোমা বর্ষণ চলে
ততক্ষণ এভাবে পড়ে থাকি। যখন বোমার শব্দ কিছুটা দূরে সরে যায় তখন দ্রুত বের
হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আবার ঘরে ঢুকে পড়ি। ঝুঁকির বিষয়টি জেনেও তা করতে হয়।’
বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিবেদক পল অ্যাডামস কেনিয়া থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি বলেন, সুদানের সেনাবাহিনীর পক্ষ খার্তুম থেকে আরএসএফকে নির্মূল করা
সম্ভব হবে না। সেনাবাহিনী ক্ষমতাধর হলেও শহরে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আরএসএফ উপযুক্ত বেশি।
সুদানের সংঘাত ঘিরে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাজ্য
সরকার বলেছে, নাগরিকদের সরিয়ে নিতে আজ সোমবার তারা শেষ ফ্লাইট পরিচালনা
করবে। সৌদি আরবের জেদ্দায় মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নিতে একটি জাহাজ সুদানে পৌঁছেছে।
সুদানের সংঘাত সিরিয়া ও লিবিয়ার চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে বলে দেশটির সাবেক
প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক সতর্ক করেছেন। লড়াই চলতে থাকলে
তা ‘বিশ্বের জন্য দুঃস্বপ্ন’ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নাইরোবিতে এক সম্মেলনে হামদক দুই বাহিনীর প্রধানদের শান্তি আলোচনায় রাজি
করাতে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন,
‘এটি একটি বিশাল দেশ, খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ…আমি মনে করি, এটি (যুদ্ধ) বিশ্বের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন হবে।’
সুদানে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সামরিক বাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান
সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে দেশটিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, সংঘাতের কারণে সুদানে তীব্রভাবে অপুষ্টিতে
আক্রান্ত প্রায় ৫০ হাজার শিশুর চিকিৎসা ব্যাহত হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ,
সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সী দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির শিকার শিশুদের
৭৫ শতাংশই সশস্ত্র সংঘাত ও সহিংসতাপ্রবণ দেশগুলোয় বাস করে।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রাথমিক কারণ হলো এ ধরনের সংঘাত। সাম্প্রতিক
বছরগুলোয় এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খরা, বন্যা, রোগের প্রাদুর্ভাব, অনিয়মিত বৃষ্টি এবং ফসলহানির মতো বিষয়।
সুদানে ২০২১ সালে যখন সশস্ত্র বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে,
তখন পশ্চিম দারফুরে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হার ছিল ৬৫ শতাংশ,
মধ্য দারফুরে ৫৯ শতাংশ আর উত্তর দারফুরে ৫৬ শতাংশ।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) তথ্য অনুযায়ী, সুদানজুড়ে অপুষ্টি উদ্বেগজনক
হারে বাড়ছে; বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০ লাখ শিশু প্রতিবছর অপুষ্টিতে ভোগে।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন