• শুক্র. জুন ৯, ২০২৩

যুদ্ধের নথি ফাঁসে অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র

এপ্রি ১২, ২০২৩

যুদ্ধের নথি ফাঁসে অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাঁস হওয়া অতি গোপনীয় নথি নিয়ে

শোরগোল পড়ে গেছে। ফাঁস হওয়া কথিত ওই নথিতে দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনার বিষয়বস্তু রয়েছে। অর্থাৎ

যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশের ওপর গোয়েন্দাগিরি করেছে। তবে ওই নথিকে অসত্য

ও বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

নথি ফাঁসের বিষয়টি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন গত সোমবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথি ফাঁস দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ‘মারাত্মক’

ঝুঁকির বিষয়। ফাঁস হওয়া নথিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের

মিত্রদের সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন,

জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে পাঠানো নথির সঙ্গে ফাঁস হওয়া ফাইলগুলোর মিল রয়েছে।

কোন উৎস থেকে নথিগুলো ফাঁস হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

এসব নথি প্রথমে টুইটার ও টেলিগ্রামের মতো আরও কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অনেক বিস্তৃত তথ্যের পাশাপাশি ফাঁস হওয়া এসব নথিতে

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বিষয়ে স্পর্শকাতর ব্রিফিংয়ের উপাদান থাকার বিষয়টিও আলোচনায়

এসেছে। ফাঁস হওয়া অন্য নথিগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ভারত-প্রশান্ত

মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। পেন্টাগন,

হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি

বিচার বিভাগও এই ফাঁসের ঘটনাটি এখন তদন্ত করে দেখছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর গোয়েন্দাগিরি

ফাঁস হওয়া নথিগুলোর মধ্যে একটি নথি দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে। তারিখবিহীন

ওই নথিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের সঙ্গে শীর্ষ সহযোগীদের

মধ্যে কথিত অভ্যন্তরীণ আলোচনার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে,

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে সিউলকে অস্ত্র দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সিউলের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে তা ইউক্রেনে পাঠাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের কোনো

পদক্ষেপ নিলে তা দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘদিনের নীতি ভঙ্গ করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার

নীতি অনুযায়ী, যুদ্ধরত কোনো দেশে অস্ত্র রপ্তানি করা যায় না।

নথিতে থাকা তথ্য যদি সঠিক হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র

দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তা প্রমাণ হয়।

তবে ইউন সুক-ইওলের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের ওপর

নজরদারির বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মিত্রতা নড়বড়ে

করার কোনো প্রচেষ্টা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে।

এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দক্ষিণ কোরিয়ার

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তাঁদের আলোচনার পর উভয়

পক্ষই ফাঁস হওয়া ওই নথির বিষয়টিকে বানোয়াট বলে মত দিয়েছেন।

তবে নথির কোন অংশ অসত্য, তা স্পষ্ট করেননি তাঁরা।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, লয়েড অস্টিনের অনুরোধে তাঁরা

আলোচনায় অংশ নেন। নথি ফাঁসের ঘটনায় সিউলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অস্টিন।

দক্ষিণ কোরিয়ার উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিম তায়ে-হোর যুক্তরাষ্ট্র সফরের

ঠিক আগে নথি ফাঁসের বিষয়টি সামনে এল। তবে তিনি বলেছেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের

সম্পর্কে এতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সেরা

গোয়েন্দা সক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ক্ষমতায়

আসার পর থেকে আমরা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করছি।’

২৬ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে ইউন সুক-ইওলের।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি সোমবার নজরদারির ঘটনায়

নিন্দা জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে একে দেশের সার্বভৌমত্বে স্পষ্ট লঙ্ঘন

ও ইউন প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যর্থতা হিসেবে মন্তব্য করা হয়েছে। কথিত ফাঁস হওয়া

নথি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি মিত্রদেশের

ওপর নজরদারির অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় ইসরায়েলের নামও রয়েছে।

নথির তথ্য অস্বীকার মিসরের

মিসরীয় কর্মকর্তা পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথিকে ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ওই নথিতে দাবি করা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ৪০ হাজার রকেট

উৎপাদন করে রাশিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল মিসর।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা নথিগুলো

গত ১৭ ফেব্রুয়ারির। ওই নথি অনুযায়ী, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ

আল-সিসির দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তাঁরা

রাশিয়াকে রকেটের পাশাপাশি কামানের গোলা ও বারুদ সরবরাহের বিষয়েও

আলোচনা করেন। ‘পশ্চিমাদের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে’ এই পরিকল্পনার

কথা গোপন রাখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সিসি।

মিসরের এই পরিকল্পনা হতবাক করে দিয়েছে মার্কিন রাজনীতিক ও কর্মকর্তাদের।

দেশটির কনেটিকাট অঙ্গরাজ্যের জুনিয়র সিনেটর ক্রিস মারফি ওয়াশিংটন পোস্টকে

বলেন, ‘রাশিয়ার জন্য মিসর গোপনে রকেট তৈরি করছে, যেগুলো হয়তো ইউক্রেনে

ব্যবহার করা হবে—এ তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের দুই দেশের

(যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর) সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বসহকারে বোঝাপড়া করতে হবে।’

আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন