লা লিগা সভাপতি ভিনিসিয়ুসের কাছে ক্ষমা চাইলেন
লা লিগায় বারবার বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান
ফুটবলার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। কিন্তু একটা ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার পাননি।
ভিনিসিয়ুসের ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। স্প্যানিশ লিগকে কাঠগড়াতেও
তুলেছিলেন সে কারণে। কিন্তু ভিনিসিয়ুসকেই কড়া কথা শুনিয়ে ব্যাপক
সমালোচনার মধ্যে পড়েছিলেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাস।
তবে তাঁকে এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়েছে। তেবাস ক্ষমা চেয়েছেন ভিনিসিয়ুসের কাছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেবাস বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে
আমার কথার প্রতিক্রিয়া খুব একটা ভালো নয়। আমি আসলে তাঁদের প্রতি
বলতে চাচ্ছি, যাঁরা মনে করছেন পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার কথাগুলো ভুল ছিল।
আমাকে এ জন্য ক্ষমা চাইতেই হবে।’ তেবাস আরও বলেছেন,
ভিনিসিয়ুসকে ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনো ইচ্ছা তাঁর ছিল না।
‘সাময়িক উত্তেজনার বশে’ তাঁর কথাগুলো শুনে তেমন মনে হতে পারে।
রিয়াল তারকার কাছে ক্ষমা চেয়ে তেবাস বলেছেন, ‘আমি ভিনিসিয়ুসের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
শুধু ভিনিসিয়ুসই নন, যাঁরা মনে করেন আমার টুইটটি ভিনিকে আক্রমণ
করে করা হয়েছিল, তাঁদের সবার কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
এবারের মৌসুমে মায়োর্কা, রিয়াল ভায়াদোলিদ, আতলেতিকো মাদ্রিদ
ও বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের পর গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষেও
বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হন ভিনিসিয়ুস। এরপর সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভিনি। একের পর
এক বর্ণবাদের ঘটনায় দায়ী করেন লা লিগা কর্তৃপক্ষকে।
ম্যাচ শেষে বর্ণবাদ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকার সমালোচনা করেন ভিনিসিয়ুস।
২২ বছর বয়সী তারকা টুইটারে লেখেন, ‘এটা প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার নয়।
লা লিগায় বর্ণবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কর্তৃপক্ষ ও স্পেনের ফুটবল
ফেডারেশন এটা মনে করে এবং সমর্থকদের দলগুলো সাহস জোগায়।’ সঙ্গে এ-ও বলেন,
‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, স্পেন আজ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে।’
ভিনিসিয়ুসের বক্তব্যের পর লা লিগার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
সেখানে লেখা হয়, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে।
তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা
গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে লা লিগা সভাপতি ভিনিসিয়ুসের প্রতি একটু বেশিই যেন আক্রমণাত্মক ছিলেন।
তিনি ভিনিসিয়ুসের টুইটের জবাবে লেখেন, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লা লিগা কী
করে এবং করতে পারে, এ বিষয়ে যেহেতু ব্যাখ্যা করা হয়নি, আমরা আপনাকে
সেটা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেরই অনুরোধ করা নির্ধারিত দুটি
তারিখে আপনি উপস্থিত হননি। লা লিগার সমালোচনা ও অপমান করার আগে
নিজের সম্পর্কে সঠিকটা জানা উচিত। নিজেকে অন্যের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার
হতে দেবেন না। নিশ্চিত করুন যে উভয় পক্ষের কর্মদক্ষতা এবং আমরা
একত্রে যা করছি, সে সম্পর্কে আপনার সম্পূর্ণ জানাশোনা আছে।’
তেবাস এখন মনে করেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াটা ভীষণ
জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা জানাতে ভোলেননি।
স্পেনের আইন অনুযায়ী লা লিগা কর্তৃপক্ষ শুধুই বর্ণবাদী
অপরাধ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে দিতে পারে।
আইন প্রয়োগ করার কাজটা স্পেন সরকারেরই। লা লিগা সভাপতি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে
লা লিগা কর্তৃপক্ষের এ–সংক্রান্ত ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব
করছেন, ‘কিছু জায়গায় যদি আমাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, তাহলে কয়েক
মাসের মধ্যেই আমরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে ব্যবস্থা নিতে পারব।
তবে লা লিগা সভাপতি এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছার অভাবই দেখছেন।
গত রোববার ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে এক দর্শক ভিনিসিয়ুসকে ‘বানর’
বলার পর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার সেই দর্শককে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেন।
ঘটনাটি অনেক দূর গড়িয়েছে। স্পেনের পুলিশ তদন্তে নেমেছে।
ভ্যালেন্সিয়াকেও জরিমানা করা হয়েছে। যে গ্যালারি থেকে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে
বর্ণবাদী মন্তব্য করা হয়েছিল, ভ্যালেন্সিয়ার আগামী পাঁচ ম্যাচে সেই গ্যালারি বন্ধ
রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্প্যানিশ ফুটবল। পুলিশ একাধিক ব্যক্তিকে আটকও করেছে।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন