• সোম. জুন ৫, ২০২৩

শীতে পুতিন কি পুরোনো কার্ড খেলতে যাচ্ছেন, কী করবে ইউরোপ

নভে ২৬, ২০২২

শীতে পুতিন কি পুরোনো কার্ড খেলতে যাচ্ছেন, কী করবে ইউরোপ

ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের দশ মাস হতে চলল। সামনে কঠিন শীত মৌসুম।

এ সময় ইউক্রেনের মানুষ ভয়াবহ চাপের মধ্যে পড়ে যাবে।

কারণ একে তো শীত, সেই সঙ্গে যুদ্ধ, ফুরিয়ে আসবে জীবনধারণের রসদ।

সম্প্রতি ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার হামলাগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ

অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে। সেসব হামলায় রাজধানী

কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ

বন্ধ হয়ে গেছে। বোমা বিস্ফোরণগুলো এতটাই মারাত্মক ছিল যে,

পার্শ্ববর্তী মলদোভার কিছু অংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট

ভ্লাদিমির পুতিন শীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, হিমশীতল আবহাওয়ায় নতুন একটি

শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হোক, তেমনটিই দেখতে চাইছেন পুতিন।

এর মধ্য দিয়ে ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির সময়ে মহাদেশটির

ঐক্য ও ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থনকে পুনরায় যাচাই করা যাবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন দের লিয়েন বুধবার

এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইউক্রেনে বেসামরিক স্থাপনায় পুতিনের বর্বর

ও সন্ত্রাসমূলক হামলার কারণে আসন্ন শীতে ইউক্রেনের মানুষকে

বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকতে হবে, এমনকি অনেক জায়গায় পানি

সরবরাহও থাকবে না।’ এরপর ন্যাটোর বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি

করে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন অব্যাহত থাকবে, সেটি যত দিন লাগুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে যেখানে কাবু করা যায়,

সেখানেই আঘাত করার কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

যাতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোয় রাশিয়ার ক্ষমতাকে আরও ভোঁতা করে দেওয়া যায়।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার

পর থেকে, ১১ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের

দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থীদেরও অস্থায়ীভাবে সুরক্ষা প্রকল্প

নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসে দেশগুলো। এর মাধ্যমে ইউরোপীয়

ইউনিয়নের দেশগুলোতে চিকিৎসা ও বাসস্থান সুবিধা পান শরণার্থীরা,

এমনকি ২০২৪ সাল পর্যন্ত কাজ করার সুবিধাও দেওয়া হয় তাদের।

এখন জেনেভাভিত্তিক সংস্থা মিক্সড মাইগ্রেশন সেন্টারের ডিরেক্টর

ব্রাম ফ্রউস বলছেন, ‘এই শীতে আরও বেশি ইউক্রেনীয় ইউরোপীয়

ইউনিয়নের দেশগুলোতে ধেয়ে আসবে। নতুন করে চ্যালেঞ্জের

মুখে পড়তে হবে ইউরোপের এই ব্লককে।’ তিনি আরও বলেন,

‘ইউরোপের নাগরিকেরা এবং তাদের সরকারগুলো কীভাবে

এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এখন দেখার বিষয়।

তারা সবাই এখন পর্যন্ত ইউক্রেনীয়দের সাদরে গ্রহণ করছে এবং

সমর্থন করছে। কিন্তু একই সময়ে ইউরোপও যখন জ্বালানি সঙ্কটের

মুখোমুখি হবে সেই সমর্থন কমতে থাকবে। তবে আমি এখনও

মনে করি, জ্বালানির বেশি দাম দিয়ে হলেও ইউরোপের

মানুষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।’

তবে, ইইউ কমিশনের একজন মুখপাত্র অনিত্তা হিপার বলছেন,

‘ইউরোপ যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। এ ব্যাপারে ইউরোপীয়

ইউনিয়ন ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আমরা আরও বেশি শরণার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে এবং

শীতে তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার পথে অনেকটা এগিয়েছি।’

তবে শুরুতে ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা যেভাবে সমাদর পেয়েছিলেন,

এখন তেমনটা পাচ্ছেন না। যেমন ৩৪ বছর বয়সী ইউক্রেনীয়

ভেরা গ্রুজোভা, যার আশ্রয় এখন ব্রাসেলসে—নানা ধরনের

প্রশাসনিক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। তিনি বলেন,

‘যখন যুদ্ধ শুরু হলো অনেক মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

জানিয়েছিল তারা ইউক্রেনীয়দের থাকতে দেবে। ফলে আমাদের

অনেকের জন্য তাৎক্ষণাৎ একটি ঠিকানা পাওয়া সহজ হয়েছিল।

কিন্তু এখন অনেক পরিবারে বা ঘরে ঠাঁই নেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে,

বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে। থাকার অসুবিধার কারণে

প্রশাসনিকভাবে ঘোষিত সুবিধাগুলো পেতেও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

শরণার্থীদের এমন প্রতিবন্ধকতার কথা স্বীকার করে হিপার বলেন,

‘যদিও শীতের শুরুতে আমরা এখনও ইউক্রেন থেকে বড় কোনো

ঢল দেখতে পাইনি, তারপরেও আমরা বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক

সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি, যাতে আগত প্রত্যেকে

আবাসন সুবিধা পেতে পারে এবং তাদের জন্য ঘোষিত সুবিধাগুলো প্রশাসনিক দ্রুত কার্যকর হতে পারে।’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার নভেম্বরের প্রতিবেদন অনুসারে,

এখন পর্যন্ত ইউক্রেন থেকে আগত ৪.৮ মিলিয়ন শরণার্থী ইইউর

অস্থায়ী সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। যার মধ্যে সর্বাধিক

ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেই। এখন পর্যন্ত

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫৪৩ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ যেমন চেক প্রজাতন্ত্র,

মলদোভা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়াকে আরও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্লকটি।

তবে মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান

আন্দ্রেই ইয়ারমাক বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

এক টুইটে তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য সুস্পষ্ট।

আর তা হচ্ছে একটি বড় আকারের মানবিক বিপর্যয় ঘটানো,

ইউরোপে আরেকটি শরণার্থী সংকটকে উসকে দেওয়া।

এটা হয় ইউক্রেনকে শান্তি স্থাপনে বাধ্য করা বা শান্তি স্থাপনে

ইউক্রেনকে রাজি করাতে পশ্চিমা শক্তিকে বাধ্য করা।

যদিও ক্রেমলিন আগেই শরণার্থীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের

বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, রাশিয়া এবং

মস্কোর প্রধান মিত্র বেলারুশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

তার সীমানা শক্তিশালী করা শুরু করেছে। পোল্যান্ডের

মতো দেশ রাশিয়ার সাথে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করেছে

এবং লিথুয়ানিয়া বেলারুশের সাথে সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর তৈরি করেছে।

ফ্রউসের ভাষ্য, বেলারুশের সীমান্তে শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে গত নভেম্বরে

যা ঘটেছিল, তেমন পরিস্থিতি আবারও দেখা দিতে পারে বলে

উদ্বেগ ইউরোপের। তবে ইউরোপীয় সীমানা সুদৃঢ় করতে গিয়ে

আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পেতে বা জরুরি প্রয়োজনে সাধারণ রুশ

নাগরিকদের জন্যও দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেখানে রাশিয়ার

বাস্তুচ্যুত অন্যান্য জাতীয়তার মানুষেরাও আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করবে।

ফলে এখানে দেয়াল তোলাটা কোনো সমাধান নয়, আরও

বিস্তৃত কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন