হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম নেওয়া শিশুটিকে দত্তক নিতে চান
ভূমিকম্পবিধ্বস্ত সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম নেওয়া শিশু আয়াকে দত্তক
নেওয়ার জন্য হাজারো মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার
মানুষ তার দায়িত্ব নিতে চাইছেন। আয়া যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন,
সেখানকার ব্যবস্থাপক এমন তথ্য জানিয়েছেন।
গত সোমবার সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা
পড়েন এক অন্তঃসত্ত্বা। সেখানেই তিনি ফুটফুটে এক মেয়েশিশুর জন্ম দেন।
নবজাতকের জন্মের পরপরই মারা যান ওই নারী। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শিশুটি।
তবে শুধু মাকে নয়, ভূমিকম্পে বাবা ও চার ভাই-বোনকেও হারিয়েছে শিশুটি।
শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ‘আয়া’। আরবি ভাষায় যার অর্থ ‘অলৌকিক’।
উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের নিচে যখন আয়ার সন্ধান পান, তখন সে মায়ের
নাড়ির সঙ্গে প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে বের করে তাকে হাসপাতালে
নেওয়া হয়। খলিল আল সুয়াদি নামের এক দূর–সম্পর্কের
আত্মীয় তাকে আফরিন শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ হানি মারুফের চিকিৎসাধীন সে। মারুফ বলেন,
‘সোমবার যখন তাকে এখানে আনা হয়, তখন তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল।
গায়ে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল, কালশিটে দাগ ছিল, শরীর ঠান্ডা হয়ে ছিল, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল।’
তবে আয়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপক খালিদ আতিয়াহ বলেন, আয়াকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ
দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাঁকে ফোন করেছেন। তবে খালিদ
তাকে এখন দত্তক দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য
কাউকে অনুমতি দেব না। তার দূর–সম্পর্কের আত্মীয় ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি তার চিকিৎসা করছি।’
খালিদের নিজেরও চার মাস বয়সী কন্যাসন্তান আছে। তাঁর
স্ত্রী এখন নিজের সন্তানের পাশাপাশি আয়াকেও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে আয়াকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন।
কুয়েতের এক টিভি উপস্থাপক লিখেছেন, আইনগতভাবে অনুমতি পেলে তিনি
আয়াকে দত্তক নিয়ে লালনপালন করার জন্য প্রস্তুত। আরেক পোস্টে অপর
এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘আমি তাকে দত্তক নিতে চাই এবং ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিতে চাই।’
আয়ার বাড়ি সিরিয়ার জিন্দায়রিস এলাকায়। সেখানে এখনো বিধ্বস্ত
ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছে মানুষ।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের
সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশ দুটির সরকারি সূত্র
ও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তুরস্কে ১৭ হাজার
৬৭৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৭৭ জন।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন