৬ টাকায় বেচতে ৫১ কোটি ডিম আমদানি করতে চায় তারা, আপত্তি খামারিদের
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা উম্মে কুলসুমের পরিবারে মাসে ডিম লাগে ২০০টির মতো।
কয়েক মাস ধরেই দেশের বাজারে ডিমের দাম বাড়তি।
কুলসুমের পরিবারে ডিমের পেছনে খরচ আগের চেয়ে প্রায় ৭০০ টাকা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ডিমের বাড়তি দামে সংসারে চাপ তৈরি হয়েছে।
কুলসুমের মতো অনেক পরিবারের ওপরই ডিমের বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে।
অনেকে ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, আবার অনেকে খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন।
দেশের বাজারের ডিমসংকট ও বাড়তি দামের পরিপ্রেক্ষিতে ৬টি
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫১ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি চেয়ে
সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে শুল্ক ছাড়ে আনতে পারলে ছয় টাকা পিস ডিম বিক্রি করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির বিষয়ে মতামত দেওয়ার
জন্য ১০ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে খামারিরা ডিম আমদানিতে আপত্তি জানিয়েছেন।
যে ৬টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চিঠি দিয়েছে, তাদের মধ্যে
৫টি প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি করে ডিম আমদানি করতে চেয়েছে।
আর একটি প্রতিষ্ঠান এক কোটি ডিম আমদানি করতে চায়।
১০ কোটি ডিম আমদানি করতে চাওয়া ৫টি প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ,
টাইগার ট্রেডিং, আহমেদ বিজনেস অ্যান্ড কমার্স প্রাইভেট লিমিটেড,
রিপা এন্টারপ্রাইজ ও পপুলার ট্রেড সিন্ডিকেট। আর এক কোটি ডিম
আমদানি করতে চায় সেভ অ্যান্ড সেফটি ইন্টারন্যাশনাল।
ডিম আমদানি নিয়ে কে কী ভাবছেন
ডিম আমদানির বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব
নাহিদ রশীদ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।
আর ডিম আমদানির অনুমতি দেব কি না, তা এখনই বলতে পারব না।
সবার সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।’
ডিম আমদানির জন্য আবেদনকারী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান
টাইগার ট্রেডিংয়ের কর্ণধার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ভারতের
বিভিন্ন রাজ্যে ডিমের দাম প্রতি পিস চার থেকে সাড়ে চার রুপি।
ডিম আমদানির জন্য সরকারের কাছে তাঁরা কিছু শুল্ক ছাড় চেয়েছেন।
শুল্ক ছাড়ে ডিম আনলে দেশের খুচরা বাজারে ছয় টাকা করে ডিম বিক্রি করা যাবে।
তবে শুল্ক ছাড় না পেলে খুচরা বাজারে প্রতি পিস ডিম আট টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।
দেশের বাজারে এখন প্রতি পিস মুরগির ডিম ১১ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতের ডিমের ওজন কম বলে দাম কম মনে করেন পোলট্রি খামার
রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসীন।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় উৎপাদন দিয়েই আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে আসছি।
যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম বাড়ায় ডিমের দামও বেড়েছে। এতে ভোক্তাও কমে যাচ্ছে।
একদিকে যেমন ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তোষ আছে, আবার খামারিরাও উৎপাদনমূল্য পাচ্ছে না।
এর ফলে খামার সংকুচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার ডিম আমদানি করলে তার নেতিবাচক প্রভাব আরও পড়বে।’
তবে টাইগার ট্রেডিংয়ের কর্ণধার মো. সাইফুর রহমান বলছেন,
খামারিদের ক্ষতিগ্রস্ত করে তাঁরা ডিম আমদানি করতে চান না।
তবে তিনি এ–ও বলেন, খামারিরা সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করলে মেনে নেবেন না।
ডিম আমদানি করা হবে কি না, গতকাল সোমবার এমন এক প্রশ্নের
জবাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন,
‘আমাদের ডিম আমদানির কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা কোন দুঃখে আমদানি করতে যাব?
এখন ১০ পয়সা বেশি দিলেও দেশের টাকা দেশে থাকছে।
বরং খামারিদের ডিম উৎপাদনে আরও উৎসাহিত করতে হবে।’
২১ নভেম্বর বৈঠক
বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ কত হচ্ছে, তা প্রতিবেদন আকারে সরকারকে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি
ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন,
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের কর্মকর্তাদের দিয়েও ডিমের বর্তমান উৎপাদন খরচ তাঁরা যাচাই করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ বিপিআইসিসি যা দেখিয়েছে, আমাদের মূল্যায়নও তার কাছাকাছি।
তারপরও পোলট্রি খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা বসব ২১ নভেম্বর।
সেখানে আলোচনা করে যা পাব, তা মন্ত্রণালয়কে জানাব।’
মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা আরও বলেন, তাঁরা খামারি ও ভোক্তা—কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান না।
সব বিষয় বিবেচনায় রেখে ক্রেতাদের স্বস্তি দেওয়ার বিষয়টি তাঁরা বৈঠকে আলোচনা করবেন।
সে জন্য পোলট্রিখাদ্য ভুট্টা, সয়াবিনসহ অন্য যেসব উপাদান আমদানি করতে হয়,
সেসবের ওপর সরকার যেন শুল্ক কমায়, এমন প্রস্তাবও দেওয়া হতে পারে।
আরও আপডেট নিউজ জানতে ভিজিট করুন