1. admin@newsdeskbd.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

গন্তব্য অনিশ্চিত অটো ব্রিকসের

  • Update Time : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ৮৯ গননা করুন

অনিশ্চিত দেশের পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকসের ভবিষ্যৎ । বড় পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয় বিধায় অনেকেই এই শিল্পে উৎসাহিত হচ্ছেনা। বলা যায়, বিশাল ব্যয়ের বেড়াজালে আটকা পড়েছে অটো ব্রিকস শিল্প। এর জন্য সরকার পরিবেশবান্ধব যে ইটের কারখানা দেশে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ‘সে আশার সম্ভাবনা ও কম।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ দূষণকারী একটি প্রচলিত ইটভাটা নির্মাণে যেখানে ব্যয় মাত্র ৪-৫ কোটি টাকা, সেখানে কম দূষণকারী একটি অটো ব্রিকস ফিল্ড নির্মাণে ব্যয় অর্ধশত কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও অটো ব্রিকসে নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধার চেয়ে শিল্প মালিকরা চিন্তা করছেন, বিপুল বিনিয়োগ ফেরত আসতে কত বছর লাগবে, আর সেজন্যই ওই পথে হাঁটছেন না তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, অটো ব্রিকস নামে সরাসরি কোনো ইটভাটা নেই। এর দুটি ধরন রয়েছে, একটি ‘হাইব্রিড হফম্যান ভাটা এবং অপরটি ‘অটোমেটিক ট্যানেল ক্লিন যেটি সনাতন ইটভাটার আপডেট ভার্সন। দুটির ধরনকে একত্রে অটোব্রিকস বলা হয়। তাই এটাকে বলা হয়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। সাধারণ ইটভাটার মতোই এই প্রযুক্তি হলেও ইট শুকানো, দূষণহীন পরিবেশ সহায়ক, সীমিত জায়গার ব্যবহার এবং কিছু সহজলভ্য জিনিসের সহায়তায় ইট উৎপাদন সম্ভব বলে জানান অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তির আরেকটি ধরন রয়েছে যেটিকে বলা হয় ‘অটো ব্লক যা শতভাগ পরিবেশবান্ধব। এটি পুরোপুরি বিদ্যুৎচালিত। তাই শতভাগ পরিবেশবান্ধব। এই ধাপের ইটের আকার বড় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিলের সহায়তায় স্বল্প সুদে বড় ধরনের ঋণ সুবিধা নিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেখানে সাধারণ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের ওপরে, সেখানে এই খাতে বিনিয়োগ করলে মাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় নামার সুযোগ রয়েছে। এবং পরিবেশ ছাড়পত্র পেতেও সহজ।

বিশ্বব্যাংক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রচলিত ইটভাটা থেকে দেশে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ১৩ শতাংশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, দূষণের মাত্রা আরো বেশি। প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ।

এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, বছরে ৮২ হাজার হেক্টর ভূমি নষ্ট হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আবাসন তৈরি ও ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করা। বর্তমান বিশ্বে বিশাল সব আধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণে কংক্রিট, অ্যালুমিনিয়াম সিট, প্লাস্টিক, কাঁচ, ফাইবার, স্টিল এবং ধাতব বস্তুর ব্যাপক ব্যবহার হলেও বাংলাদেশসহ বহু স্বল্পোন্নত দেশে প্রধানত ব্যবহার হচ্ছে ইট।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের অধিকাংশ ইটভাটাই মানছে না কোনো নিয়ম, প্রতিনিয়তই নষ্ট করে যাচ্ছে পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান : মাটি, বায়ু, কাঠ এবং ওজোন স্তর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে নির্মিত প্রচলিত বা সনাতন পদ্ধতির ইটভাটার সংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র অনুযায়ী বৈধ ভাটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮৫টি এবং অবৈধ ৩ হাজার ৪৯১টি। গত ৩ বছরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ৯২৫টি। এসবের মধ্যে ঢাকা বিভাগে বৈধ ১১৬৩টি ও অবৈধ ৬৬৪টি, রাজশাহীতে ২৫২টি ও অবৈধ ৭৭১টি, বরিশালে ৩৫৯টি ও অবেধ ১৪২টি, সিলেটে ২৬৩টি ও অবৈধ ৩৬টি, খুলনায় ৩০৮টি ও অবৈধ ৭৯০টি, রংপুরে ১৯৪টি ও ৮৪৪টি, ময়মনসিংহে ৮১টি ও অবৈধ ৪৩৪টি এবং চট্টগামে ৭৬৫টি ও অবৈধ ৭৩৫টি। অধিদপ্তরের বাইরে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, যা হিসাবের বাইরে। এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সরকার এই ইটভাটার বিকল্প অটো ব্রিকস নামকরণ করে প্রথমে জিগজ্যাগ অর্থাৎ হাইব্রিড হফম্যান নামে কম পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা নির্মাণে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করে। এ ধরনের ইটভাটায় চুল্লির নিচে পানির স্তর স্থাপন করে পরিবেশ সহায়ক উপযোগী পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। কয়লা, মাটি বা কাঠ ব্যবহার হলেও যখন ধোঁয়াগুলো কুণ্ডলি হয়ে চুল্লির নিচের স্তর থেকে ওপরের দিকে ধাবিত হয়; পানির স্তর স্পর্শ করে ওপরের দিকে ওঠার কারণে নির্গত ক্ষতিকর কার্বন অনেকটা পরিশোধন হয়ে যায়। এতে পরিবেশদূষণ কিছুটা রোধ হয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরেরর । এখন পর্যন্ত জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে অর্থাৎ হাইব্রিড হফম্যান পদ্ধতির ইটভাটা রয়েছে ৪৭টি। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম রয়েছে খুলনা বিভাগে। এই পদ্ধতিতে ঢাকায় ১৭টি, রাজশাহীতে ৪টি, রংপুরে ৯টি, চট্টগ্রামে ৮টি, ময়মনসিংহে ৭টি, রাজশাহীতে ৪টি এবং ২টি খুলনা বিভাগে। আর সনাতন পদ্ধতিতে চলছে শতভাগ দুটি বিভাগ একটি বরিশাল ও অপরটি সিলেট।

এটি শতভাগ না হলেও পরিবেশ সহায়ক। এই পদ্ধতির জন্য যে ধরনের উপাদান প্রয়োজন তা পর্যাপ্ত না। কারণ কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাদ পড়া ফ্লাইঅ্যাশ দিয়ে এই প্রযুক্তির ইট উৎপাদন হয়ে থাকে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কমকতা বলেন, সনাতন পদ্ধতির ইটভাটায় কাঠ, মাটি ও কয়লা দিয়ে পোড়ানো হলেও ধোঁয়া থেকে পরিবেশদূষণ হয়। আর জিগজ্যাগ পদ্ধতি কিছুটা উন্নত হওয়ায় সেখানে এগুলোর ব্যবহার হলেও কিছুটা পরিবেশবান্ধব। আর অটো ব্রিকসে সুবিধা বেশি, এর মধ্যে দূষিত বায়ুটাকে টেনে নিয়ে কাঁচা ইটের ওপর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে দূষণ কিছুটা কমে।

সংশ্লিষ্ট কমকতা আরো বলেন, তবে সবাই এই পদ্ধতিতে যেতে চায় না বড় বিনিয়োগের ঝুঁকির কারণে। এক কথায় বললে, বাংলাদেশে আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। তবে ফুল অটো হলে সুবিধা বেশি হতো, তাতে মাটি কম লাগবে ও চিকন বালু ব্যবহার করা যাবে। তখনই এটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে। বায়ুদূষণ থাকবে না।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন...
© newsdeskbd All rights reserved © ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews