পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র আদমপুরে অত্যাধুনিক পাইরোলাইসিস প্ল্যান্টের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৬০ কেজি পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হবে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ১ হাজার ২০০ লিটার জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়েছে।
ডেনমার্ক সরকারের অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছে এই। প্ল্যান্টটি সোমবার সকাল ১০টার দিকে উদ্বোধন করা হয়। প্ল্যান্টটি বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে ফরিদপুর পৌরসভা, প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন, বেসরকারি কোম্পানি রিভার-সাইকেল, ড্যানিডা মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ও সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) পার্টনারশিপ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাইরোলাইসিস প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন ডেনমার্ক দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এবং হেড অব ট্রেড আলী মুস্তাক বাটসহ অতিথিরা। পরে ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ রোধ করি, পরিবেশ বাঁচাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে একটি সাইকেল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি আদমপুর থেকে শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল চত্বরে এসে শেষ হয়।
এরপর অম্বিকা মেমোরিয়াল হলরুমে ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পথপ্রদর্শনে ফরিদপর’ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে জানানো হয়, পাইরোলাইসিস প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ থেকে একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক অপসারণ করে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা হবে। পাতলা পলিথিন ও প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করে পাইরোলাইসিস তেল ও কার্বন তৈরি করা যাবে, যা থেকে উৎপাদিত তেল ট্রাক্টর, ট্রাক, জাহাজ, ডিজেলচালিত জেনারেটরে ব্যবহার করা যাবে এবং ব্ল্যাক কার্বন ছাপাখানার কালি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
ফরিদপুরে পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সচিত্র উপস্থাপনকালে জানানো হয়, ৬৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ফরিদপুর পৌরসভা থেকে প্রতিদিন ৬ দশমিক ২ টন একবার ব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা থেকে মাত্র ৩০ শতাংশ বর্জ্য রিসাইক্লিং করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছ আগামী কয়েক বছরের মাধ্যমে তা ৫০ শতাংশে নিয়ে আসা হবে।
পৌর মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ শহর তৈরি করতে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের প্ল্যান্ট থাকলেও। সেগুলো অত্যাধুনিক পদ্ধতির নয়, ফরিদপুরের এই প্ল্যান্ট অত্যাধুনিক।
এ সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (ঢাকা) মো. জিয়াউল হক, ইউএনআইডিওর প্রতিনিধি জাকিউজ্জামান, ডব্লিউএসইউপির কান্ট্রি ম্যানেজার উত্তম কুমার সাহা ও প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের এশিয়া রিজওনাল পরিচালক অয়ন এ ব্যানার্জি।
বক্তারা বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অধিকাংশ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও নরম প্লাস্টিক পরিবেশ, নদী-নালায়, সড়কের পাশে গিয়ে জমা হচ্ছে; যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ পদ্ধতির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এই বর্জ্য সঠিকভাবে কর্মীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। সে জন্য বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীদের মূল্যায়ন করা দরকার। এ ছাড়া এসব বর্জ্য বাসাবাড়িতে আলাদা স্থানে রাখা এবং প্লাস্টিক পণ্য কম ব্যবহারের জন্য শহরবাসীদের আহ্বান করা হয়।
Leave a Reply