শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
তাওবা শব্দটি একটি মহান শব্দ। এর অর্থ অনেক গভীর। তাওবা এমন নয় যে মুখে শব্দটি বললাম অতঃপর পাপে লিপ্ত থাকলাম। আল্লাহ কী বলছেন তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন মানে তাওবা করো।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৩)
কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য অবশ্যই কিছু শর্ত থাকে। আলেম-ওলামারা কোরআন ও হাদিস থেকে তাওবার জন্য কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন, নিম্নে তা আলোচনা করা হল।
১. যতো দ্রুত সম্ভব পাপ থেকে বিরত হওয়া।
২. আগে যা ঘটে গেছে তার জন্য অনুতপ্ত হওয়া ক্ষমা চাওয়া।
৩. পুনরায় পাপকাজে ফিরে না আসার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা ।
৪. মানুষের পাওনা পরিশোধ করা। প্রাপকদের হক ফিরিয়ে দেবে, যা অন্যায়ভাবে নেওয়া হয়েছিল বা তাদের কাছে থেকে মাফ চেয়ে নেবে।
বিশুদ্ধভাবে তাওবা করার জন্য আলেমগন কিছু শর্ত উল্লেখ করেছেন, নিচে সেগুলো উদাহরণসহ আলোচনা করা হল।
১. শুধু আল্লাহর জন্য পাপ ত্যাগ করা, অন্য কারো জন্য নয়,
তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে; কোনো বাড়িতে ঢোকার পথ না পেয়ে বা সিন্দুক খুলতে না পেরে কিংবা পাহারাদার ও নিরাপত্ত রক্ষাকারির ভয়ে।
ওই ব্যক্তিকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে দুর্নীতি দমন বিভাগের লোকজনদের জোর তৎপরতায় ধরা পড়ার ভয়ে ঘুষ খাওয়া বন্ধকরে।
ওই ব্যক্তিকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি মদ পান, মাদকদ্রব্য বা হেরোইন সেবন ইত্যাদি ছেড়ে দিয়েছে দারিদ্র্যের বা স্বাস্থ্য হানির কারণে।
তেমনি তাকে ও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে সমর্থহীন হওয়ার কারণে গুনাহ করা ছেড়েছে। যেমন—মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছে তার কথায় জড়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কিংবা জেনা করছে না যেহেতু সে সহবাস করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কিংবা চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ারায়।
এসবের জন্য অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে, সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে অবনত মস্তকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা। (ইবনে মাজাহ, সহিহ আল-জামে, হাদিস : ৬৮০২)
২. পাপের ভয়াবহতা অনুভব করা, সঠিক তাওবার সঙ্গে কখনো আনন্দ ও মজা মনে করা যাবে না অতীত পাপের কথা স্মরণ হলে অথবা কখনো ভবিষ্যতে সেসব কাজে ফিরে যাবে, এ কামনা মনে স্থান দেওয়া যাবে না।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহ.) তাঁর লিখা রোগ ও চিকিৎসা ও আল-ফাওয়াইদ নামক গ্রন্থে গুনাহের অনেক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, কাজে কর্মে লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে, জীবজন্তু তাকে অভিশাপ দেয়, সে সর্বদা অপমানিত হতে থাকে, অন্তরে মোহর পড়ে যায়, লানতের মাঝে পড়ে যায় যাতে দোয়া কবুল হয় না, জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, আত্মমর্যাদা বোধ কমে যায়, লজ্জা চলে যায়, নিয়ামত দূর হয়ে যায়, আজাব নেমে আসে, পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়, তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের ওপর এবং পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
পাপের ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে।
৩. যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরি করাও পাপ।
৪. আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন—জাকাত দেওয়া, যা সে আগে দেয়নি। কেননা এতে দরিদ্র লোকজনের অধিকারও আছে।
৫. পাপের স্থান দ্রুত ত্যাগ করা, যদি সেখানে অবস্থান করলে আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদের পরিত্যাগ করা। মহান আল্লাহ বলেন :আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকিরা ছাড়া। (সুরা: আল-জুখরুফ, আয়াত : ৬৭
৭. নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা। যেমন—মাদকদ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র ছবি, ব্লু ফিল্ম, অশ্লীল নভেল বা নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই পাপের উপকরণ থেকে মুক্ত হতে হবে।
৮. ভালো সঙ্গী-সাথীদের গ্রহণ করতে হবে, যারা তাকে দ্বিনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবংসতপথে চলার ব্যপারে উৎসাহ প্রদন করে। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ আছে।
৯. নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে, যাকে সে হারাম দিয়ে তৈরী করেছে। তাকে হালাল রুপাতরিত করতে হবে।
১০. পাপিকে তাওবা অবশ্যই দম আটকে যাওয়া বা জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার আগেই হতে হবে। নবী কারিম (সা.) বলেছেন :যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তাওবা করবে গলায় গড়গড়া ওঠার পূবে, তবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করতে পারেন। (সহিহ আল জামে হাদিস : ৬১৩২)
বিপ্র/সাল
Leave a Reply