অনলাইন ডেক্স:
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ছাত্ররা জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে হাতে নিয়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে ছাত্র ও তরুণদের এই সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দলটি কাজ করতে ইচ্ছুক। ছাত্র বিদ্রোহের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলুপ্তি এবং নতুন রাজনৈতিক মীমাংসা বাস্তবায়ন।
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, যারা ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে দেশকে পুনর্গঠন করতে চায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারমুক্ত করে দেশকে নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। দেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরতে চাই, তাদের আয়োজনে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপস্থাপন করবে। আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল।
এদিকে দলীয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ইস্যুতে তরুণরা কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায় তারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এই দুটি প্লাটফর্ম থেকে যারা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে আগ্রহী তাদের থেকেই মূলত দলটি গঠিত হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও দলে থাকবেন। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা সরাসরি দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন না। তবে তাদের কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নেবেন। এই দুটি প্ল্যাটফর্ম ভেঙে না দিয়ে ‘চাপ গ্রুপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
দলীয় ইশতেহার প্রণয়ন এবং সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ মাসেই সারাদেশে থানা পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাংগঠনিক কাজেও সক্রিয়। তারা জেলা পর্যায়ে কমিটিও দেওয়া শুরু করেছে।
কমিটি গঠন ছাড়াও জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছেন সংগঠন দুটির নেতারা। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ। এছাড়া উভয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এছাড়া উভয় সংগঠনই তাদের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করেছে। বর্তমানে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে পৃথক কার্যালয় থেকে দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
দুই দফায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে ১০৭ জন হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের পর আটজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজনকে যুগ্ম সদস্য সচিব, পাঁচজনকে সহ-মুখপাত্র, চারজনকে যুগ্ম প্রধান সংগঠক ও ১৪ জনকে সংগঠক করা হয়। এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান সংগঠক মনোনীত হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম। নাগরিক কমিটি সমগ্র দেশকে 20টি জোনে (এলাকা) ভাগ করে এবং আয়োজকদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়। ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতারাও জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যপদে রয়েছেন।
সমন্বয়কারীরা ছিলেন জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান নেতা। প্রাথমিকভাবে 65 জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী-কো-অর্ডিনেটরের একটি দল ছিল। পরে 158 জনকে দলবদ্ধ করা হয়। ২২ অক্টোবর দলটি বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২১ নভেম্বর ১৮ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এখন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ২২ জন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মৌলিক পার্থক্য হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে দলের নেতৃত্ব নির্বাচন। এখানে পরিবারতন্ত্র প্রাধান্য পাবে না। দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত হলেই জাতীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, তরুণরা পেশিশক্তির ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চায়। তাই শিক্ষিত, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে। গত ১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও সামাজিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুক্ত ছিলেন তাদের নিয়েই দলটির উত্থান হবে
Leave a Reply